সারা বাংলা

মির্জা কাদের বললেন অসাবধানতাবশত এ ঘটনা, বৃদ্ধ বললেন মারে নাই

গত শুক্রবার (১৬ জুলাই) সকালে ঈদুল আজহা উপলক্ষে অসহায় ও দরিদ্রদের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণের সময় নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার এক অসহায় বৃদ্ধকে ঘুষি মারার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন মেয়র কাদের মির্জা। 

আরও পড়ুন: বস্ত্র বিতরণে বৃদ্ধকে ঘুষি দিলেন কাদের মির্জা, ভিডিও ভাইরাল

২০ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ফেসবুক লাইভের মধ্যে ১৭ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের সময় দেখা যায়, কাদের মির্জা এক বৃদ্ধকে শাড়ি দিয়েছেন। বৃদ্ধ শাড়িটি পরিবর্তন করতে চাইলে কাদের মির্জা তার বুকে ঘুষি মেরে সরিয়ে দেন। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর মেয়র কাদের মির্জা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।  ভিডিওটি শেয়ার হওয়ার পর নানা নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়। এরপর সেই বিষয়টি নিয়ে ওইদিন রাতেই নিজের ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। 

স্ট্যাটাসে কাদের মির্জা লেখেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আপনারা জানেন মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে জনজীবন অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে আমি আমার পৌরসভা থেকে নিম্ন আয়ের অসহায় মানুষদের জন্য বিভিন্ন সহযোগিতা করে আসছি। এর আগেও আমি সর্বদা চেষ্টা করতাম, অসহায় গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে থাকতে। আমার পৌরসভা ও আমার ব্যক্তিগত পক্ষ হতে, আমি শুধু কোম্পানীগঞ্জ নয়, কবিরহাট, দাগনভূঞা, সোনাগাজী, সেনবাগসহ বিভিন্ন জনপদের অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করে আসছি।  কখনও কোনো মানুষ সাহায্য প্রত্যাশা করে আমার কাছ থেকে খালি হাতে ফিরে যায়নি। 

আজও আমার পৌরসভাতে অসহায় মানুষদের এক হাজারের বেশি শাড়ি-লুঙ্গি, পাঁচশ জনকে নগদ অর্থ ও প্রায় দুই হাজার জনের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়।  পৌরসভার ছোট্ট আঙিনায় সহস্রাধিক মানুষ একত্রিত হয়ে যাওয়ায় দ্রুততার সাথে কাপড় বিতরণ করতে হয়েছিল। 

তাই যাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে তাদের দ্রুত চলে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছিল। তখন একজন মানুষ কাপড় পাওয়ার পরও দাঁড়িয়ে থাকায় এবং একাধিকবার বলার পরও সে মাস্ক না লাগানোর কারণে তাকে দ্রুত সরে যাওয়ার জন্য হাত দিয়ে সরানো হচ্ছিল।  এখানে তাকে আঘাত করা হয়নি।  এ বিষয়ে তিনি কোনো আক্ষেপও করেননি। 

সহস্রাধিক মানুষের মাঝে একযোগে এতগুলো ত্রাণ বিতরণ করার সময় অজান্তে কিছু অসাবধানতা হতে পারে, এক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত কোনো কিছু করা হয়নি।  আমি সব সময় অসহায় গরিব মানুষের পাশে আছি।  কখনও কেউ আমার কাছে সাহায্যের জন্য এসে খালি হাতে ফিরে যায়নি। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী আমি যতদিন বেঁচে থাকব অসহায় গরিব মানুষের সেবা করে যাব। 

সবার কাছে প্রত্যাশা রাখব, অন্যের সমালোচনা না করে, যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায় গরিব মানুষের সহযোগিতায় হাত বাড়ান। একজনের সমালোচনা না করে মানুষকে সহযোগিতা করুন।’

স্ট্যাটাসের সত্যতা নিশ্চিত করে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা মুঠোফোনে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ দিয়েছেন ঈদে বিত্তশালী আত্মীয় কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষীদের উপহার না দিয়ে অসহায় ও গরিবদের উপহার প্রদান করতে।  সে প্রেক্ষিতে আমি  জননেতা ওবায়দুল কাদের এমপি মহোদয়ের সহযোগিতায় অসহায় গরিব মানুষের মাঝে শাড়ি, লুঙ্গি, খাদ্য এবং নগদ অর্থ উপহার প্রদান করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সহস্রাধিক মানুষের মাঝে একযোগে এতগুলো ত্রাণ বিতরণ করার সময় অজান্তে কিছু অসাবধানতা হতে পারে, এক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত কোনো কিছু করা হয়নি। একজন মানুষ কাপড় পাওয়ার পরও দাঁড়িয়ে থাকায় এবং একাধিকবার বলার পরও মাস্ক না লাগানোর কারণে তাকে দ্রুত সরে যাওয়ার জন্য হাত দিয়ে সরানো হচ্ছিল। এখানে তাকে আঘাত করা হয়নি। 

এদিকে, আবদুল কাদের মির্জার বৃদ্ধকে ঘুষি মারার বিষয়ে কথা বলেছেন সেই বৃদ্ধ।  তার পরিচয়ও পাওয়া গেছে। তিনি বসুরহাট পৌরসভার বাসিন্দা। তার নাম এনামুল হক কালু। 

এনামুল হক কালু বলেন, ‘কাপড় দেওয়ার সময় আমরা ঝামেলা করি দেখে মেয়র সাহেব (আবদুল কাদের মির্জা) হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন। আমারে কোনো মারে নাই, কিচ্ছু করেও নাই। তিনি (কাদের মির্জা) খুব ভালো মানুষ। গরিব মানুষকে সাহায্য করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি পরে আবার মেয়র সাহেব থেকে চাল নেওয়ার জন্য গেছি।  উনার বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নাই।  উনি সব সময় আমাদের সাহায্য করেন।’