ভালোবেসে দেশ ছেড়ে পালালেও, ঘর করা হলো না প্রিয়া কর্মকারের। যশোরের চৌগাছার হিজলী সীমান্ত থেকে ভারতীয় নাগরিক প্রিয়া কর্মকার (২০) ও তার প্রেমিকসহ সাত বাংলাদেশিকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
শুক্রবার (২৭ আগস্ট) ভোরে উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের গদাধারপুর গ্রামের মৃত আজম আলীর ছেলে আখের আলীর বাড়ি থেকে হিজলি ক্যাম্পের জওয়ানরা তাদের আটক করে।
আটকের পরে ভারতীয় নাগরিক প্রিয়া কর্মকারকে প্রথমে স্থানীয় ইউপি সদস্য শিমুল হোসেনের জিম্মায় রাখা হয়। পরে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাকে ভারতে তার স্বজনদের কাছে ফেরত দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য শিমুল হোসেন।
প্রিয়া কর্মকার ভারতের টেংরা গ্রামের বাসিন্দা। তারা একভাই এক বোন। ভাই ভারতীয় সেনাসদস্য। আত্মীয়তার সূত্রে সৌরভ ও প্রিয়া কর্মকারের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
আটক অন্যরা হলেন— প্রিয়ার প্রেমিক যশোরের শার্শা উপজেলার কানাইনগর গ্রামের শংকর সরকারের ছেলে সৌরভ সরকার (২৫), একই গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে আরিফ হোসেন (২২), ঝিকরগাছার কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের হাসেম আলীর ছেলে সুজন (২০), রফিকুল ইসলামের ছেলে জালাল উদ্দীন (১৮), একই গ্রামের নোমান হোসেন (২৭), তাদের বহনকারী ইজিবাইক চালক একরামুল (২০), চৌগাছার গদাধারপুর গ্রামের মৃত আজম আলীর ছেলে আশ্রয়দাতা আখের আলী (৫৫)।
আটক ব্যক্তিরা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছিল বলে হিজলি বিজিবির দাবি। তাদের চৌগাছা থানার মাধ্যমে আদালতে পাঠানো হবে বলে জানান আন্দুলিয়া বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার নজরুল ইসলাম।
এদিকে, শুক্রবার বিকেলে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে প্রিয়া কর্মকারকে তার স্বজনদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়। এসময় বিজিবির পক্ষে আন্দুলিয়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার নজরুল ইসলাম ও বিএসএফর পক্ষে ১০৭ ডেল্টা ব্যাটালিয়নের উত্তর বয়রা ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার কাজুর উপস্থিত ছিলেন।
প্রেমিক সৌরভ সরকারের জ্যাঠাতো ভাই অরবিন্দ বলেন, ‘ভারতের টেংরা গ্রামে সৌরভের আত্মীয় রয়েছে। সেখানে যাতায়াতের মাধ্যমে প্রিয়ার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। এর পরে ফোনে কথা চলে তাদের। হঠাৎই কাউকে কিছু না জানিয়ে মেয়েটি বাংলাদেশে এসে সৌরভের কাছে ফোন দেয়। এবং বলে তাকে না নিয়ে গেলে সে এখানেই আত্মহত্যা করবে। সে কারণেই হয়তো আমার ভাই এখানে এসেছিল।’ তিনি বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় এলেই তো আর কেই অবৈধ হয় না! ভারতীয় মেয়েটাকে ফেরত দেওয়া হলো। কিন্তু আমাদেরকে জেলখানায় যেতে হলো— এ কেমন বিচার?’
প্রিয়া কর্মকার বলেন, ‘আমি বাবার কাছে অনুমতি নিয়েই এসেছি। আমি বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমার বুঝশক্তি হয়েছে। আমাকে ফেরত দিলে আমি আত্মহত্যা করবো।’
চৌগাছা থানার ডিউটি অফিসার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সুমন বলেন, ‘এঘটনায় চৌগাছা থানায় একটি মামলা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের শনিবার আদালতে পাঠানো হবে।’