হাট সিন্ডিকেট চক্রের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা প্রশাসন।
অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করেছেন খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। উপজেলার একটি হাট ইজারা থেকে প্রতিবছর যেখানে রাজস্ব আয় হয় এক কোটির টাকার ওপরে। সেখানে ওই সিন্ডিকেটের কারণে হাট ইজারা না হওয়ায়, এ বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট তথ্যে জানা গেছে, সাঁথিয়া উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ২৮টি হাট রয়েছে। উপজেলার প্রধান একটি হাট হলো ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের মিয়াপুর-রসুলপুর (বনগ্রাম) হাট। প্রতিবছর এই হাট এক কোটি টাকার উপরে ইজারা ডাক হয়ে থাকে। বিডি, ভিডি, স্ট্যাম্পসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় দেড় কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়ে সরকারি কোষাগারে যুক্ত হয়।
চলতি ১৪২৮ সনে শক্তিশালী হাট দস্যু সিন্ডিকেটের রোষানলে পড়ে হাটটি। বিগত ১৪২৭ সনে এ হাটের ইজারা ডাক হয় ১ কোটি ১৩ লাখ ১ হাজার টাকা। সিন্ডিকেটের কারণে এ বছর (১৪২৮ সন) মাত্র ৩০ লাখ টাকা ইজারা দাখিল করা হয়। বিগত তিন বছরের গড় ইজারার কাঙ্ক্ষিত ডাক না হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে থেকে পরপর চারবার ইজারা আহবান করা হয়।
কিন্তু ইজারা ডাক ৩০ লাখ টাকার বেশি না হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম জামাল আহম্মেদ, উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সভাপতি করে ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তার (তহশিলদার) সহযোগিতায় উক্ত হাটের খাজনা আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। বাংলা সনের বৈশাখ মাসের প্রথম হাটবার থেকে ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী রেজাউল করিম লাভলু প্রয়োজনীয় জনবল নিয়ে টোল আদায় শুরু করেন।
হাটের সাবেক ইজারাদার শামীম হোসেন বলেন, ‘গত বছর করোনার কারণে আমরা হাট নিয়ে লোকসান গুনেছি প্রায় ৩০ লাখ টাকা। যেকারণে এবার আর টেন্ডারে অংশ নেইনি। আর সরকার নির্ধারিত টাকায় ডাক না ওঠায় খাস কালেকশন করছেন ইউএনও। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। এখানে কারা সিন্ডিকেট করে হাটের ডাকে অংশ নেয়নি তা জানি না।’
এ বিষয়ে ক্ষেতুপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মনসুর আলম পিনচু জানান, এই হাট যত টাকা ডাক হবে তার ২৫ ভাগ ইউনিয়ন পরিষদকে দিতে হবে। সেই হিসেবে এবার ইজারা ডাক না হওয়ায় পক্ষান্তরে আমার পরিষদও রাজস্ব বঞ্ছিত হলো। ডাক বেশি হলে পরিষদের রাজস্বও বেশি হতো।
তিনি আরও জানান, কারা টেন্ডার কিনলেন, কেন তারা ড্রপ করলেন না। কেন একজনই বা ড্রপ করলেন তাদের সবাইকে প্রশ্নের মুখোমুখি করলেই তো সব পরিষ্কার হয়ে যেত।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম জামাল আহম্মেদ জানান, হাটটির সরকারি ডাক ছিল ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। কিন্তু চারবার টেন্ডার আহবান করার পর একজন মাত্র ৩০ লাখ টাকার দরপত্র দাখিল করে। সরকারি ডাকের কম হওয়ায় পরে খাস কালেকশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সপ্তাহে দুই হাট থেকে ৭০/৭২ হাজার টাকা খাজনা আদায় হচ্ছে। যা বছরে ৩৫/৩৬ লাখ টাকা। এতে করে প্রায় কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্ছিত হবে সরকার।