সারা বাংলা

ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় দেশ সেরা পঞ্চগড়ের রাহাত

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সরকারি ও বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিটসমূহে প্রথম বর্ষের ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় দেশ সেরা হয়েছেন পঞ্চগড়ের নাজমুস সাকিব রাহাত।

তার সর্বমোট স্কোর ২৯৫। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উর্ত্তীণ রাহাত ভর্তি পরীক্ষায় ১০০-এর মধ্যে ৯৫ পেয়েছেন। ভর্তি পরীক্ষায় তার রোল নম্বর ছিলো ৫৫০৩৪৩৭।

রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রকাশ হওয়া ফলাফলে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

রাহাতের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের শিংরোড রতনী বাড়ী এলাকায়। তার বাবা সোলায়মান আলী। ৪ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট রাহাত। তিনি ২০১৮ সালে পঞ্চগড় বিপি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০২০ সালে সেন্ট জোসেফ সেকেন্ডারি স্কুল থেকে এইচএসসি পাশ করেন।

রাহাত মুঠোফোনে রাইজিংবিডিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, আমার এ সাফল্য আল্লাহর রহমতে হয়েছে। মা-বাবার দোয়া এবং আত্মীয় স্বজন, শিক্ষকসহ অনেকের প্রেরণা ও অবদান রয়েছে। সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট পেয়েছি বড় ভাই ইব্রাহিম খলিলের কাছ থেকে।

রাহাত বলেন, আমি আগে থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। আমার স্বপ্ন দক্ষ চিকিৎসক হয়ে সমাজের গরীব, দুঃখী ও অসহায় মানুষের পাশে দাড়াবো।

রাহাত জানান, এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাতেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন। মাত্র এক নম্বর কম স্কোর থাকায় সেখানে ভর্তির সুযোগ পাননি। -ডেন্টালে দেশ সেরা হতে পারলেন আর মেডিকেলে ভর্তির সুযোগই হলো না! কারণ ব্যাখ্যায় রাহাত রাইজিংবিডিকে একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জানতে পেরে পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্র দেখতে যাই।

সেখান থেকে রুমে ফেরার সময় একটি বাসে উঠি। বাসের একটি সিটে দেখি একজন বৃদ্ধ বসে আছে। কেউ বৃদ্ধের পাশে বসছে না। আমি কিছু না ভেবেই বৃদ্ধের পাশে গিয়ে বসলাম। একটু পর বাসের লোক ভাড়ার জন্য আসলে দেখলাম বৃদ্ধ কেঁদে ফেললো।

আমি কান্নার কারণ জানতে চাইলে বৃদ্ধ জানায়, তার বাড়ি বরিশালে। ঢাকায় একটি বাড়িতে দারোয়ান কাজ করতেন। কিছুদিন আগে কাজ থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। বর্তমান তার মুখের দাঁত গুলো সব নড়বড়ে হয়ে গেছে। ডাক্তারের কাছে গেলে ১২৮ টাকার জন্য চিকিৎসা না দিয়েই ফিরিয়ে দেয়া হয় তাকে।

রাহাত বলেন, বৃদ্ধের কথা শুনে আমার খুব খারাপ লেগেছিলো। রুমে ফিরলাম, ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছিলো ঠিক মতই। কিন্তু পরীক্ষার ঠিক ৫ দিন আগে আমি একটু অসুস্থ হয়ে যাই। অসুস্থতা খুব বেশি না হলেও কেন যেন পড়ালেখা একদমই করতে পারছিলাম না। এভাবে পরীক্ষা দিয়ে এক মার্ক কম পেয়ে ভর্তির সুযোগ হারাই।

মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে ভেঙে পড়েছিলাম। একদিন হঠাৎ ওই বৃদ্ধের কথা মনে পড়ে যায়। তখন ভাবি, আচ্ছা ওই বৃদ্ধ কি চাইছিলেন আমি দাঁতের ডাক্তার হই? যার জন্য মেডিকেলে হলো না। আমি ডেন্টালের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করি। সাফল্য পেলাম। আমি ডাক্তার হয়ে এই অসহায় মানুষদের সেবা করতে চাই।

নাজমুস সাকিব রাহাতের বড় ভাই মাদ্রাসাশিক্ষক মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, রাহাত অত্যন্ত মেধাবী, ভদ্র ও বিনয়ী। আমি বড় ভাই হলেও অন্য পরিচয়ে তার শিক্ষক ছিলাম।

পরিবার থেকে আমাদের স্বপ্ন ছিলো রাহাতকে চিকিৎসক বানাবো। সেই আলোকেই তাকে সবসময় সাপোর্ট দিয়েছি। এখন স্বপ্ন পূরণের জন্য সকলের দোয়া চাই।