হারিয়ে যাওয়ার ২৫ বছর পর আঁখি নূর খুঁজে পেয়েছেন তার বাবা-মাকে। ফিরে এসেছেন নিজ বাড়িতে।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি রেডিওর ‘আপন ঠিকানা’ শিরোনামে এক অনুষ্ঠানে আঁখির সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার হয়। সেই সূত্রে আখির সন্ধান পায় তার পরিবারের সদস্যরা।
শুক্রবার (১৭ সেপ্টম্বর) ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার লংগাইর ইউনিয়নের মাইজবাড়ী গ্রামে নিজ পরিবারের কাছে ফিরেছেন আঁখি।
ছয় বছর বয়সে আখিঁ রাজধানি ঢাকার গুলিস্তান মোড়ে একটি পানের দোকানের সামনে থেকে হারিয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পায়নি পরিবারের সদস্যরা। এরপর দেখতে দেখতে কেটে গেছে ২৫টি বছর।
দীর্ঘদিন পর আখিকে খঁজে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা পরিবারের সবাই। তাকে এক নজর দেখতে বাড়িতে এসে ভীড় করছেন প্রতিবেশীরা।
আখির বাবা মানিক মিয়া। তারঁ দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। জীবিকার তাগিদে ১৯৯৬ সালে কাজের সন্ধানে ঢাকায় যান তিনি। সেখানেই স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে থাকতেন তিনি। একদিন মানিক মিয়া তার ৬ বছরের শিশু মেয়ে আঁখিকে নিয়ে বাইরে যান।
গুলিস্তান মোড়ে একটি পানের দোকানের আখিকে বসিয়ে রেখে পাশেই একটা কাজে যান মানিক মিয়া। সেখানে ছিনতাইকারীদের কবলে পরেন তিনি। যে কারণে ফিরতে দেরি হয়ে যায় তার।
মানিক মিয়া জানান, পানের দোকানে ফিরে এসে আর আঁখিকে দেখতে পায়নি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান মেলেনি আঁখির। আঁখির সন্ধানে ঢাকায় মাইকিং, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ও থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এরপর কেটে গেছে ২৫টি বছর।
আঁখি বলেন, ‘সেদিন বাবাকে না পেয়ে অনেক কান্নাকাটি করে একটি বাসে উঠি। কাঁদতে দেখে এক লোক আমাকে নিয়ে যান। পরে ওই লোক আমাকে একটি আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে আসেন। এরপর থেকে শুরু হয় নতুন জীবন। আশ্রয় কেন্দ্রেই বড় হই। সেখান থেকে বের হয়ে একটি বিউটি পার্লারে কাজ শুরু করি। এক সময় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আশুলিয়ার মাসুম মোল্লার সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তাকেই বিয়ে করি। বর্তমানে স্বামীর সঙ্গে সেখানেই থাকছি। এখন আমি এক ছেলে ও এক মেয়ের মা। ’
তিনি আরো বলেন, “মোবাইলে ফোনে এফএম রেডিও শুনতাম। সেখানেই ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মানুষের হারিয়ে যাওয়ার গল্প শুনি। আমার কাছেও মনে হয় আমার হারিয়ে যাওয়ার গল্পটা যদি বলতে পারতাম। আর আমার মা-বাবা যদি সেটা শুনে আমার খোজঁ নেয়। তাই ওই অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকার চেয়ে আবেদন করি। বহুদিন অপেক্ষা করে ডাক পাই। পরে সেখানে আমার সাক্ষাৎকার প্রচার করা হলে তা ফেইসবুকে অনেক শেয়ার হয়। সেই সূত্র ধরেই আবশেষে আমি আমার পরিবারকে খুঁজে পেলাম। ”
দীর্ঘদিন পর মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে আখিঁ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আখিঁ বলেন, ‘এই আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না।
আঁখির বাবা মানিক মিয়া বলেন, ‘এভাবে মেয়েকে খুঁজে পাবো তা কখনো কল্পনাও করিনি। মেয়ে হারানো যে কত কষ্টের, তা সেই বাবা-মাই বোঝেন; যাদের সন্তান হারিয়েছে। বহু দিনের বুকের কষ্ট আজ দূর হলো।’
আঁখির স্বামী মাসুম মোল্লা বলেন, ‘আমি সব কিছু জেনেই আঁখিকে বিয়ে করি। বিয়ের পর তার পরিবারের সন্ধান পেতে অনেক চেষ্টা করেছি। আল্লাহর রহমত থাকায় সেই চেষ্টা সার্থক হয়েছে। আমি খুবই খুশি।’