সারা বাংলা

কে কাটলো আনারুলের আঙ্গুল?

নওগাঁর ধামইরহাটে আনারুল ইসলাম নামের একজন মেধাবী ছাত্রের ডান হাতের দুটি আঙুল কাটা নিয়ে রহস্যের তৈরি হয়েছে।

তরুণ আনারুল বলছেন, চাঁদার দাবিতে দুর্বৃত্তরা তার আঙ্গুল কেটে নিয়েছে। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, মোবাইলের আবদার বাবা-মা পূরণ না করায় আনারুল নিজেই নিজের হাতের আঙ্গুল কেটেছেন!

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর ) সকালে বগুড়ার চকফরিদ কলোনী এলাকার ইঞ্জিনিয়ার ছাত্রাবাসে এই ঘটনা ঘটে। 

পুলিশ বলছে, প্রথমে দুর্বৃত্তরা আঙ্গুল কেটে দিয়েছে বললেও ওই শিক্ষার্থী বাবা মার কাছে মোবাইল ফোন কেনার আবদার করে সেটা না পাওয়ায় নিজেই নিজের আঙ্গুল কেটে ফেলেছে!

বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর ) সকালে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও মিডিয়া সার্কেল) ফয়সাল মাহমুদ বিষয়টি জানিয়েছেন।

আনারুল ইসলাম (২২) পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড চকউমর পাটারি পাড়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।  আনারুল ইসলাম ২০১৮ সালে জয়পুরহাট পলিটেকনিকেল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে চতুর্থ সেমিস্টার পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ওই ইনস্টিটিউটে পঞ্চম সেমিস্টার না থাকায় স্থান পরিবর্তন করে বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আনারুল ইসলাম মেধাবী ছাত্র। তিনি ২০১৭ সালে সফিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। স্থানীয় এক বন্ধুর সহযোগিতা নিয়ে বগুড়া পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট এ ভর্তি হওয়ার জন্য মেস ভাড়া করেন। মেসে পড়াশোনা করার কারণে চাঁদা দিতে হবে এমন দাবি করেন ওই এলাকার কয়েকজন যুবক।

আনারুল ইসলাম রাইজিংবিডির ধামাইরহাট সংবাদদাতাকে বলেন,  ‘গত মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুইজন সন্ত্রাসী মেসের রুমে ঢুকে আমার মোবাইলসহ টাকা দাবি করে। এগুলো না পেয়ে প্রথমে মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে আমাকে একটি ওয়াশ রুমে নিয়ে যায়। তারপর আমার দুই হাত পিছমোড়া করে ডান হাতের দুই আঙ্গুল কেটে দেয়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় অনেকটা গোপনে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে প্রাণে বাঁচি আমি।’ এই বিষয়ে আনারুলের প্রতিবেশী আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলেটি অনেক মেধাবী, পড়াশোনায় ভালো। ওর মা-বাবা কঠিন পরিশ্রম করে সংসার চালিয়ে ছেলেটির পড়াশোনার খরচ যোগান দিচ্ছেন। ছেলেটির এভাবে আঙ্গুল কেটে দেওয়া আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

আনারুলের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সারাদিন ভ্যান চালাই। অভাবের সংসারে যে দু’চার টাকা পাই তা দিয়েই সংসারসহ ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাতে হয়। ছাত্র হিসেবে অনেক মেধাবী হয়াই ওকে নিয়ে আমরা অনেক স্বপ্ন দেখতাম।’

ছেলের  উপর মধ্যযুগীয় এমন অমানবিক নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়ে মা সাহারা খাতুন বলেন, ‘সংসারে ওই ছেলেই একমাত্র আমাদের আশার প্রদীপ ছিল। এখন তো ওর হাতের আঙ্গুল নেই, কলম ধরবে কিভাবে? কীভাবে পড়াশোনা করবে?’

চোখেমুখে একরকম আতঙ্ক নিয়েই আনারুল ইসলাম বলেন, ‘আমিতো পড়াশোনা করতে চাই। বাবা মার স্বপ্ন পূরণের জন্য ভালো একটা চাকরি করতে চাই। কিন্তু ওরা তো আমার আঙ্গুল কেটে দিয়েছে, আমি কলম ধরবো কিভাবে? পরীক্ষা দিবো কিভাবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাকে বাঁচান।’

এ বিষয়ে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আব্দুল গনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। যেহেতু ঘটনাটি বগুড়ায় ঘটেছে সেহেতু অভিযোগটি সেখানেই দায়ের করতে হবে।’

এদিকে, বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও মিডিয়া সার্কেল) ফয়সাল মাহমুদ জানান, প্রাথমিকভাবে যে কেউ মনে করতে পারে, ছেলেটি ভুল বলছে বা ভয়ে এমন কথা বলছে। ধারণা করতে পারে সে নিজে আঙ্গুল কাটেনি কোনো দুর্বৃত্ত কেটেছে। ঘটনাস্থলে আমি গিয়েছিলাম। ছেলেটি একটি সিকিউর ছাত্রাবাসে থাকতেন এবং মেসে অনেক ছেলে থাকতেন। ছেলেটি নিচ তলায় থাকতেন। ঘটনার শিকার ছেলেটি দোতলায় উঠে বাথরুমের প্যানে বসে এই কাজ করেছে। প্যানের পাশে দেয়ালে রক্তের দাগ এবং যেখানে সে আঙ্গুল রেখে কোপ দিয়েছে সেখানে দাগ হয়ে আছে। এ বিষয়ে মেসের অন্য শিক্ষার্থীদের কেউ কিছু বলতে পারেনি।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও মিডিয়া সার্কেল) আরও জানান, আমরা সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখেছি। ঘটনার আগে ওই মেসে বাইরে থেকে কোন দুর্বৃত্ত বা চাঁদাবাজ প্রবেশ করেনি বা ঘটনার পরেও অন্য কাউকে বের হতে দেখা যায়নি। ওই শিক্ষার্থীকে একা দেখা গেছে সে নিজেই রক্তাক্ত হাত নিয়ে ইজিবাইকে উঠতে যাচ্ছিলো। এখন আমাদের খতিয়ে দেখার বিষয়টি হচ্ছে সে কেন এই কাজটি করেছে?