চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) অধ্যায়নরত ছাত্রী কিংবা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। তাদের সবারই সমস্যা সংকট বা প্রয়োজনে একটি অন্যতম নাম শামীমা সীমা।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সংগ্রামের নেত্রী হিসেবে সীমার খ্যাতি থাকলেও পরোপকারে দলমত নির্বিশেষে সকলের জন্য সবার আগেই এগিয়ে আসেন সীমা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ভর্তি পরীক্ষায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশ নিতে আসা অসংখ্যা ভর্তিচ্ছু ছাত্রী ও তাদের নারী অভিভাবকদের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা করে দিয়ে আলোচনায় এসেছেন সীমা। অনেক ভর্তিচ্ছু ছাত্রী গভীর রাতেও ক্যাম্পাসে এসে সীমার সহায়তা চেয়ে নিরাশ হতে হয়নি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ভর্তি পরীক্ষায় সুদূর রাজশাহী থেকে ভর্তি পরীক্ষায় দিতে মাকে সঙ্গে করে এসেছিলেন আফরোজা শাহীন। দূরের যাত্রায় একদিন আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে গিয়ে গভীর রাত হয়ে যায় ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে। ক্যাম্পাসে পৌঁছালেও কোথায় আশ্রয় নিবেন, কোথায় রাত কাটাবেন কিছুই জানা ছিলো না আফরোজার। নানা মাধ্যম হয়ে ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসেন সীমা। গভীর রাতেই ছাত্রী হলে আন্তরিক আতিথেয়তা পান আফরোজা ও তার মা।
সুদূর কুষ্টিয়া থেকে একাই ভর্তি পরীক্ষা দিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন এলিনা। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দূরের কথা চট্টগ্রাম শহরই তার অচেনা। সঙ্গে নেই কোনো অভিভাবকও। এখানেও সাহায্যকারী আর আশ্রয়দানকারী হিসেবে এগিয়ে আসেন সীমা। ছাত্রী হলে এলিনার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়। পরদিন যথাসময়ে পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।
এলিনা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কুষ্টিয়া থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে চট্টগ্রামে আমি ছিলাম অভিভাকহীন। একা মেয়ে হিসেবে আমার নিরাপদ থাকার কোনো জায়গা ছিলো না। শামীমা সীমা আপুর সহায়তা ও তত্ত্বাবধানে আমি ছাত্রী হলে থাকার সুযোগ পেয়েছি।’
একই রকম তথ্য জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আফসানা। রাইজিংবিডিকে আফসানা বলেন, ‘আমার একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নারী অভিভাবকসহ রাত ২টায় ক্যাম্পাসে পৌঁছে। তাদের থাকার কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। রাত ২টায় সীমা আপুকে কল দিলে তিনি তাৎক্ষণিক সাড়া দেন এবং নিজেই এগিয়ে এসে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও নারী অভিভাবককে ছাত্রী হলে থাকার সুব্যবস্থা করে দেন।’
এভাবে চলমান ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কয়েকশ ছাত্রী ও তাদের নারী অভিভাবকদের আতিথেয়তা দিয়েছেন সীমা। থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। সহস্র ছাত্রীকে ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে নানা দিক নির্দেশনা ও সুপরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তার পাশাপাশি করোনাকালে স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ, রমজানে ইফতার ও সেহরি বিতরণসহ নানা ধরনের সহায়তা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমে সবার অগ্রভাগে থাকেন সীমা। শামীমা সীমা রাইজিংবিডিকে জানান, তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি সহপাঠী সিনিয়র জুনিয়র শিক্ষার্থীদের সমস্যা ও সংকটে পাশে থাকার ব্রত নিয়েই নিয়েই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
সীমা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী। ছাত্রলীগের ত্যাগ, আদর্শ এবং সংগ্রামের ইতিহাস বুকে ধারণ করেই আমি সবার পাশে দাঁড়াই। চলমান ভর্তি পরীক্ষায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভর্তিচ্ছু ছাত্রীদের পাশে থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি।’
শামীমা সীমা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী সাবরিনা চৌধুরীর উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের কল্যাণে ও এবং তাদের সমস্যা সংকটে পাশে থাকার সর্বাত্বক চেষ্ঠা করি। এছাড়া সিনিয়র জুনিয়র অনেকেই আমাকে এই ভর্তি পরীক্ষায় ও সেবামূলক কাজে সহায়তা করেন। এদের মধ্যে অন্যতম সামিয়া রিয়া, নওরিন, কানিজ, বর্ষা, মুনিয়া, নুসরাত, মাবিয়া, রিয়া, অর্থি, বিথি, দিবা, পুনম ও লিজা প্রমুখ।’
শামীমা সীমা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধ মঞ্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি কালের কণ্ঠ শূভ সংঘের সভাপতি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সাড়িতে থাকা সীমা সমসাময়িক সময়ের রাজনীতির সংগ্রামের নেত্রী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন সর্বমহলে।