জন্ম থেকেই দুই হাতের কব্জি না থাকলেও লেখাপড়া থেমে থাকেনি মেধাবী ছাত্র মোবারক আলীর। পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি। ভয়কে জয় করেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার আশা তার।
মোবারক আলীর বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামে। তার বাবা এনামুল হক পেশায় একজন দিনমজুর।
সোমবার (২২ নভেম্বর) ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ নম্বর কক্ষে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে গণিত পরীক্ষায় অংশ নেন মোবারক। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে অতিরিক্ত সময় দেওয়ার কথা থাকলেও বাড়তি সময় লাগেনা মোবারক আলীর। অন্য শিক্ষার্থীদের মতোই নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শেষ করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি।
মোবারক আলীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, জন্ম থেকে দুই হাতের কজ্বি ছিল না মোবারক আলীর। তাকে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তার অভিভাবকরা। কি হবে তাকে দিয়ে। মোবারক আলীর বেড়ে উঠার সময় তার মা মরিয়ম বেগমের চেষ্টার কমতি ছিল না। ছেলের এমন অবস্থায় বিচলিত হলেও ভেঙ্গে পড়েননি তিনি। মায়ের সাহসে ছেলেকে স্কুলমুখী করা হয়। দুই হাতের কজ্বি একখানে করে কলম দিয়ে খাতায় লেখানোর কৌশল শিখানো হতে থাকে মোবারক আলীকে।
স্কুলে ভর্তির পর সহযোগীতা করেন অন্য ছাত্ররাও। এভাবে পিএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। ২০১৮ জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষায়ও পেয়েছেন জিপিএ-৫।
চলতি এসএসসি পরীক্ষায় ওই কব্জিবিহীন দু’হাত একত্রে করে খাতায় উত্তর পত্র লিখে চলেছেন অদম্য মেধাবী মোবারক আলী। দুটি হাতের আঙ্গুল না থাকলেও সুস্থ স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মতোই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন তিনি।
মোবারক আলীর মা মরিয়ম বেগম জানান, ‘দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মোবারক সবার বড়। সে নিজের কাজ নিজেই করতে পারে। ওর ইচ্ছাশক্তি প্রবল। আমরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। তারপরেও সে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
মোবারক আলী জানান, ‘হতদরিদ্র পরিবারে আমার জন্ম। কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন ভালো রেজাল্ট করে বাবা-মাসহ শিক্ষকদের মুখ উজ্বল করতে পারি।’
কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জায়দুল হক জানান, ‘মোবারক প্রতিবন্ধী হলেও যথেষ্ঠ মেধাবী এবং পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও করে। আমি আশা করছি সে ভালো ফলাফল করবে।’
ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব গোলাম কিবরিয়া জানান, ‘মোবারক আলী অন্য শিক্ষার্থীদের মতোই প্রতিটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। পরীক্ষায় তাকে বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে নির্দিষ্ট সময়েই পরীক্ষার খাতায় লিখা শেষ করছে।’