রত্না চক্রবর্তী। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়েছেন। কঠিন সেই যুদ্ধের পরও তার জীবন যুদ্ধ থামেনি এক দিনের জন্যও।
বার্ধক্যে এসেও আধুনিক শপিং মলের টয়লেট পরিস্কার করেই কেটেছে জীবনের দীর্ঘ সময়। শেষ বয়সে এসে মিলেছে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি। মিলেছে ভাতা। কিন্তু নিজের কোনো বাড়ি না থাকায় চট্টগ্রাম শহরের একটি খুঁপড়ি ভাড়া বাসাতেই সন্তানদের নিয়ে চরম কষ্টে জীবন কাটছিলো তার।
এখন অসহায় সেই বীরাঙ্গনা রত্না চক্রবর্তীর মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে এগিয়ে এসেছে দেশের ইলেক্ট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স জায়ান্ট শিল্পগ্রুপ ওয়ালটন। স্বাধীনতার মাস ডিসেম্বরেই ওয়ালটনের সৌজন্যে বীরাঙ্গনার জন্য বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে ওয়ালটন সূত্রে জানা গেছে।
বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য ওয়ালটনের পক্ষ থেকে বীরাঙ্গনা রত্না চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে রত্না চক্রবর্তী নিজেই বুধবার (৮ ডিসেম্বর) রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে রাইজিংবিডিতে ‘বীরাঙ্গনা রত্নার জীবন চলে টয়লেট পরিষ্কার করে’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর এই বীরাঙ্গনা সরকারি ভাতা পেতে শুরু করেন। ভাতা পাওয়ার পর থেকে শপিংমলের টয়লেট পরিষ্কারের কাজ তিনি ছেড়ে দেন। কিন্তু একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় ভাড়া বাসায় কষ্টের সঙ্গে দিনাতিপাত করছিলেন। এই নিয়ে চলতি বছর মার্চে রাইজিংবিডিতে আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি ওয়ালটনের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) এর দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ওয়ালটনের সৌজন্যে বীরাঙ্গনা রত্না চক্রবর্তীকে একটি বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার মহৎ উদ্যোগ গ্রহণের উদ্যোগ নেন।
রত্না চক্রবর্তী চট্টগ্রাম নগরীর যে এলাকায় বসবাস করেন, সেই এলাকার ওয়ালটন চকবাজার প্লাজার ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন জানান, বীরাঙ্গনা রত্না চক্রবর্তীকে বাড়ি করে দেওয়ার ব্যাপারে ওয়ালটনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর প্রক্রিয়াও চুড়ান্ত করা হয়েছে।
জাকির হোসেন বলেন, ‘রত্না চক্রবর্তীর কাছ থেকে আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছি। তিনি তার গ্রামের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এক খণ্ড জমিতে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সে অনুযায়ী ওয়ালটনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
রত্না চক্রবর্তীর গ্রামের বাড়ি লোহাগাড়া এলাকার ওয়ালটন প্লাজার ব্যবস্থাপক সুজন বলেন, ‘আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পেয়েছি। বীরাঙ্গনা রত্না চক্রবর্তী গ্রামের যে জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করতে আগ্রহ দেখাবেন, সেখানেই তার জন্য বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে বীরাঙ্গনা রত্না চক্রবর্তী বুধবার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ওয়ালটনের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও নিয়েছেন। আমার গ্রামে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া একখণ্ড ভিটিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। ওয়ালটন তাতে সম্মতি দিয়েছে। আমি জায়গাটি এখন তাদের নির্দিষ্ট করে দিলেই বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’
রত্না চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি একটি বাড়ির জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, গ্রামে উপজেলা প্রশাসন, সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন জায়গায় আবেদন নিবেদন করেছি, কিন্তু কেউ আমার জন্য এগিয়ে আসেনি। শেষ পর্যন্ত আমাকে একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে এগিয়ে এসেছে ওয়ালটন গ্রুপ। ওয়ালটনের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আমার বয়স হয়েছে। কখন মারা যাই ঠিক নাই। ওয়ালটনের করে দেওয়া ছায়াতলে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস নিতে চাই।’