গোপালগঞ্জের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. শহিদ মোল্লা (৭৩)। একাধিক সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। যুদ্ধক্ষেত্রে পা, কোমর ও বুকে গুলিবিদ্ধ হন অকুতোভয় এই মুক্তিযোদ্ধা।
শহরতলীর লতিফপুর ইউনিয়নের ঘোষেরচর উত্তরপাড়া গ্রামে বাস করেন শহিদ মোল্লা। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) তার বাড়িতে বসে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি শোনান যুদ্ধদিনের কথা।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শোনার পর শরীরের রক্ত টগবগ করে ওঠে। তখন থেকেই আমি মনে মনে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইককান্দি গ্রামের আলতাফ চৌধুরী মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে যেতে চাই। জানতে পেরে আমার বাবা-মা ও স্ত্রী বাধা দেন। বলছিলেন যুদ্ধাহত এই মুক্তিযোদ্ধা।
কথা বলতে বলতে তিনি হারিয়ে যান স্মৃতির অতলে। বলেন, তাদের বাধা উপেক্ষা করে ৯ দিনের নববধূকে রেখে ৬০ জনের দল নিয়ে ভারতের বাগদা বর্ডার দিয়ে বনগাঁ চলে যাই। সেখান থেকে কামরুল ইসলাম রাইচ আমাকে টাকিয়া আর্মি ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেন। কয়েকদিন পর তিনশ জনের একটি দল দিয়ে আমাকে ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলের অধীনে দেবহাটা টাউন শ্রীপুর পাঠানো হয়।
সেখানেই প্রথম পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হই। ওই যুদ্ধে মোট ৭ জন পাক হানাদার মারা যায়। এরপর আমরা সাতক্ষীরার বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ করেছি। যশোরেও যুদ্ধ করতে হয়েছে। যশোরে যুদ্ধ ক্ষেত্রে আমার ডান পায়ে, মাজায় ও বুকে মোট ৫টি গুলি লাগে। তখন আমাকে ভারতে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে দেশ স্বাধীন হওয়ার ১৩ মাস পর আমি দেশে ফিরে আসি।
পাকিস্তানের নারকীয় তাণ্ডব নিজ চোখে দেখেছন। মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইবে পাকিস্তান- জীবনের শেষ সময়ে এসে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।
শহিদ মোল্লার স্ত্রী হাফিজা বেগম বলেন, বিয়ের মাত্র ৯ দিনের মাথায় আমার স্বামী মুক্তিযুদ্ধে চলে যান। অনেক বাধা দিয়েও তাকে আটকাতে পারিনি। এরপর আমি খুব ভয়ে ছিলাম। তিনি বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন বুঝতে পারছিলাম না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন আমার স্বামী বাড়ি ফিরে এলো তখন আমার কলিজায় পানি আসে। তবে এখন আমি খুবই গর্ববোধ করি স্বামীর জন্য। সে দেশ স্বাধীন করে ঘরে ফিরেছে।