দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে বেড়েছে রাজস্ব আদায়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এ বন্দরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা। যা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ কোটি টাকা বেশি। ব্যবসায়ীদের দাবি, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে পণ্য আমদানির পাশাপাশি সরকার এ বন্দর থেকে আরো বেশি আয়ের সুযোগ পাবে।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিষয়টি জানিয়েছেন হিলি কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার কামরুল ইসলাম।
সরেজমিনে হিলি স্থলবন্দর ও কাস্টমসে দেখা যায়, সকাল থেকে লাইন ধরে হিলি বন্দরে প্রবেশ করছে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক। বন্দরের স্কেলে গাড়িসহ মালামাল ওজন করছেন বন্দর কর্মীরা। পরে ওই ট্রাকগুলো থেকে পণ্য নামিয়ে দেশি ট্রাকগুলোতে তা তুলে দিচ্ছেন শ্রমিকরা। কাজ শেষে ভারতীয় ট্রাকগুলো আবার সীমান্ত অতিক্রম করে দেশে ফিরে যাচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এই বন্দরে গড়ে প্রতিদিন ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করতো ১৬০ থেকে ১৮০টি। তবে নতুন বছরের শুরুতে প্রবেশ করেছে ২৫০ থেকে ২৮০টি ট্রাক।
হিলি স্থলবন্দরের শ্রমিক প্রধান গোলাম মোর্শেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এই বন্দরে আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই শ্রমিকদের কাজের পরিমাণও বেড়ে গেছে। সরকারি বিধিনিষেধ অনুযায়ী বন্দরে শ্রমিরা লোড-আনলোডের কাজ করছেন। সব শ্রমিকদের করোনাভাইরাসের টিকার আওতায় আনা হয়েছে।’
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি কারক শাহিনুর রেজা শাহিন বলেন, ‘বন্দরের অবকাঠামো কিছুটা বৃদ্ধির কারণে ভারত থেকে আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান আমরা আগের চেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করছি। তবে যদি সরকার হিলির অবকাঠামোগুলো আরও উন্নত করে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো করে তাহলে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।’
হিলি পানামা পোর্ট লিংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহারব হোসেন প্রতাব মল্লিক বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যেও এই বন্দরে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক আছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এখানে সব কার্যক্রম চলছে। বর্তমান এ বন্দরে ২৫০ থেকে ২৬০টি ভারতীয় পণ্যবাহী গাড়ি প্রবেশ করছে।’
এই স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, ‘হিলি বন্দরের বেশকিছু সমস্যা আছে। এখানকার রাস্তা-ঘাট সরু, জরাজীর্ণ এবং ভাঙাচোরা অবস্থায় আছে। সরকার যদি এসব সমস্যার সমাধান করে তাহলে এ বন্দরে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে স্বস্তি পাবে। আগের তুলনায়ে এখন এই বন্দরে আমদানি বেড়ে গেছে। ভবিষ্যতে তা আরো বৃদ্ধি পাবে। তার আগে বন্দর সড়কের উন্নয়ন হওয়া প্রয়োজন। আমরা আশাবাদী সড়ক সমস্যার অবসান হলে এ বন্দরে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ পণ্যবাহী ভারতীয় গাড়ি আসতে পারবে। সরকারের রাজস্বও অনেক গুণে বেড়ে যাবে।’
হিলি কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার কামরুল ইসলাম বলেন, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জানুয়ারি) পর্যন্ত হিলি কাস্টমসে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১৭৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থ (২০২১-২০২২) বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬৫ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে এ বন্দর থেকে।
এছাড়া ২০২০-২১ অর্থ বছরে (জুন থেকে জুন) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩১২ কোটি টাকা, আদায় হয়েছিল প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৭ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৩৮ কোটি টাকা। জানুয়ারি মাসে রাজস্বর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৪৩ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ কোটি টাকা।
তিনি আরও জানান, ২০২১-২২ অর্থ বছরের আরও ৫ মাস বাকি আছে। আশা করছি গত অর্থ বছরের চেয়ে এ বছর বেশি রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে।