৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। প্রতিবছর এই দিনে নারীর অধিকার নিয়ে নানা কর্মসূচি পালিত হলেও পঞ্চগড়ের নারী শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বৈষম্য দূরীকরণে নেই কোনো পদক্ষেপ। স্বাস্থ্য ঝুঁকি আর লোকজনের নেতিবাচক কথা উপেক্ষা করে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে সমান কাজ করেও তারা পাচ্ছেন অর্ধেক মজুরি।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে অসুস্থ্য হয়ে পড়লেও কোনো ক্ষতি পূরণ দেওয়া হয়না এসব নারী শ্রমিকদের। এমনকি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়না তাদের। আর তাই এই বৈষম্যের অবসান চান পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ৫০ হাজার পাথর শ্রমিক। তাদের অভিযোগ, পুরুষের সমান কাজ করেও ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নারীরা।
অভাবের তাড়নায় ক্রমেই পঞ্চগড়ের নারীরা পাথর শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পাথর ভাঙাসহ বিভিন্ন কাজ করে সংসারের হাল ধরেছে এসব তারা। ভূ-গর্ভস্থ পাথর উত্তোলন-প্রক্রিয়াকরণ ছাড়াও সমতল ভূমির চা পাতা সংগ্রহ, চা কারখানা, ভবন নির্মাণ ও কৃষিকাজে পুরুষের পাশাপাশি তাদের ভূমিকা অপরিসীম।
জানা গেছে, পাথর শিল্পে একজন পুরুষ শ্রমিক সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করে মজুরি পান ৫০০-৫৫০ টাকা। একই সময় একই কাজ করে নারী শ্রমিকরা পান মাত্র ৩০০-৩৫০ টাকা।
সোমবার (৭ মার্চ) তেঁতুলিয়ার সর্দারপাড়া এলাকায় মহানন্দা নদীর পাড়ে পাথর ক্র্যাশিং মেশিনে কাজ করতে দেখা যায় বেশ কিছু নারী শ্রমিককে। সেখানে কথা হয় রাহেনা বেগমের সঙ্গে। রাহেনা বেগম জানান, এক যুগ ধরে পাথর শ্রমিকের কাজ করছেন তিনি। দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে রেখে রাহেনার স্বামী মারা গেছেন ৭ বছর আগে। পাথরের কাজ করেই বড় মেয়েকে পাত্রস্থ করেছেন। আরেক মেয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী, ছেলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে।
তিনি আরো জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করে মুজুরি পান ৩৪০ টাকা। এ দিয়ে সন্তানের লেখা পড়া আর সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তবে একই কাজ করে পুরুষরা পাচ্ছেন ৫০০ টাকা। আমরা যদি পুরুষের সমান মজুরি পেতাম তাহলে আমাদের জন্য ভালো হত।’
একই কথা বলেন ফাতেমা, মর্জিনা, সাজেদা এবং আয়েশা। তারা বলেন, পুরুষের সমান কাজ করেও ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে আমাদের। পুরুষের মজুরির সমান না করলেও কাছাকাছি করে এই বৈষম্য দূর করার দাবি তাদের।
পাথর ব্যবসায়ী আদনান বলেন, পুরুষ শ্রমিকরা ভারি কাজগুলো করে যা নারীরা পারেনা। তাই তাদের বেতন পুরুষদের চেয়ে কম। এছাড়া সব জায়গায় একই নিয়মে পাথর শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয়।
পঞ্চগড়ের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরস্পর’র নির্বাহী পরিচালক আকতারুন নাহার সাকী বলেন, “মজুরি বৈষম্যের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে মালিক পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গী ও মননশীলের অভাব বলে আমি মনে করি। আমরা বরাবরই মজুরি বৈষম্যের প্রতিবাদ করে আসছি। আমরা চাই এই বৈষম্য দূর হোক। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ শ্রম আইন নিয়ে কাজ করা ‘বাংলাদেশ লেবার ল’ অর্গানাইজেশন’- এর দৃষ্টি আকর্ষন করবো।”