সারা বাংলা

লন্ডন বাজারে ‘পঁচা চা’ দিনে ১ কাপের বেশি না

বাংলাদেশে ‘লন্ডন বাজার’। আশ্চর্য হলেও এটাই সত্যি। এই নামে বাজার রয়েছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকার নাবিরবহ গ্রামে। এই ‘লন্ডন বাজার’ একটি চায়ের দোকানের জন্য বিখ্যাত। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত হতে মানুষ আসে সেখানে চা পান করতে। তবে একজনকে একদিনে এককাপের বেশি চা দেওয়া হয় না।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে পলিথিনে ঘেরা চায়ের দোকান। মাটির চুলায় বড় কেতলিতে গরুর খাঁটি দুধ গরম হচ্ছে। সেই দুধ দিয়ে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চা বানানো হয়। তবে এই চায়ের দোকান সপ্তাহে একদিন বন্ধ থাকে;  সেটা সোমবার।

৯০ বছর বয়সী রহিম উদ্দিন পঁচা চায়ের দোকানের মালিক। তার হাতে তৈরি চায়ের স্বাদ নিতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করে। রহিম উদ্দিন পঁচা বলেন,  ৭০ বছর ধরে তিনি চা বিক্রি করেন। এর মধ্যে ২২ বছর বিক্রি করেছেন ঢাকার মহাখালীতে। এরপর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় চা বিক্রি শেষে ৮ বছর আগে চলে আসেন নিজ গ্রামে। চা বিক্রি করেই ভালো ঘরে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছেন। ছেলে এখন চাকরি করে।

রহিম উদ্দিন পঁচা বলেন, প্রথম যখন শুরু করেন, তখন এককাপ চা বিক্রি করে পেতেন ১০ পয়সা। এরপর চারআনা, আটআনা, একটাকা এভাবে বাড়তে বাড়তে এখন বিক্রি করেন ২০ টাকায়। চা বিক্রি ছাড়া অন্য পেশায় জড়াননি তিনি। এখন মাসে খরচ বাদে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি চা বিক্রি করে যেতে চান।

নাবিরবহ গ্রামের বাসিন্দা জাহের আলী বলেন, এখন আর কেউ গ্রামের নাম নাবিরবহ বললে চেনে না। ‘লন্ডন বাজার’ বলেই চেনে। পঁচা ভাইয়ের চায়ের কারণে গ্রামটি দেশে পরিচিতি পেয়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে আসে চা পান করতে। কেউ মোটরসাইকেল, কেউ প্রাইভেটকারে। আবারও অনেকে বাসে চলাচলের পথে দল বেঁধেও আসেন। তবে ‘পঁচা চা’ কেউ দিনে এক কাপের বেশি পায় না। 

ত্রিশাল থেকে চা পান করতে এসেছেন শহিদুল ও তার তিন বন্ধু। তিনি বলেন, ‘ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, গাজীপুরে লন্ডন বাজার আছে এবং সেখানে নামকরা চা পাওয়া যায়। এটা দেখে এসেছি। পঁচা চাচার চায়ের অসাধারণ টেস্ট কিন্তু এত দূর থেকে এসেও এক কাপের বেশি পেলাম না। এতে আশ্চর্য হয়েছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রহিম উদ্দিন পঁচা বলেন, ‘প্রত্যেকের ব্যবসার একটি বৈশিষ্ট্য থাকে। যেখান থেকে আসুক, যে ব্যক্তিই আসুক; এক কাপের বেশি চা দেই না। এটাই আমার ব্যবসার বৈশিষ্ট্য। আর সত্যি বলতে, এটা আমার ওস্তাদের আদেশ।’