বউ প্রয়োজন? ভাড়ায় পাবেন। শুধু বউ কেনো, ছোটছোট শিশু চান? হাঁস-মুরগী কিংবা গরু-ছাগল? তার মিলবে এ গ্রামে। প্রয়োজন অনুসারে কখনো ঘণ্টা ভিত্তিক, আবার কখনো সারাদিনের জন্য ভাড়া নিতে পারবেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভাদুন ও তার আশপাশের কয়েকটি গ্রামে আপনি নাটক বা সিনেমার শুটিংয়ের জন্য সবকিছুই ভাড়ায় পেয়ে যাবেন।
গাজীপুর জেলা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভাদুন গ্রাম। এই গ্রামে ৯০-এর দশক থেকে শুরু হয়েছে নাটক-সিনেমার শুটিং কার্যক্রম। এ গ্রামটিকে বলা হয়ে থাকে চলচ্চিত্র শিল্পীদের আবাসভূমি।
এ গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই আপনার সঙ্গে হয়তো দেখা হয়ে যাবে কোন এক অভিনেতা বা অভিনেত্রীর। প্রতিদিন শুটিং থাকেই এ গ্রামে। ভাদুন গ্রামে রয়েছে মেঘলা, আকাশ ভিলা, ঐশী সুটিং, বিলভিলা, হাসনাহেনা, শাহিনের বাড়ি, আপন ভূবন, কৃষ্ণচূড়াসহ অজস্র শুটিং স্পট।
এছাড়াও অভিনেতা সালাউদ্দিন লাভলু, মোশারফ করিম, পপিসহ অনেক শিল্পীর নিজস্ব শুটিং স্পট রয়েছে এখানে। নাটক বা সিনেমার শুটিংয়ের প্রয়োজনে যা কিছু প্রয়োজন, সবকিছুই ভাড়ায় পাওয়া যায় এ গ্রামে।
গ্রামবাসী, শুটিং স্পটের মালিক ও পরিচালকরা জানান, শুটিংয়ের প্রয়োজনে ঘণ্টাভিত্তিক কিংবা সারাদিনের জন্য বউ, শিশু বাচ্চা, নাপিত, কামার, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, ঝাড়ু, দাসহ সবকিছুই ভাড়ায় পাওয়া যায় এখানে।
ভাদুন গ্রামের বাসিন্দা অনিস বলেন, ‘আমাদের ভাদুন, পূবাইলসহ আশপাশের গ্রামে কয়েকশ’ শুটিং স্পট ও রিসোর্ট রয়েছে। শুটিংয়ের প্রয়োজনে সবকিছুই সরবরাহ করতে পারে গ্রামবাসী। আগে ফ্রি-তে দিলেও এখন এসব যোগান দিতে টাকা নেওয়া হয়।’
মেঘলা শুটিং স্পটের মালিক রুবেল সরকার বলেন, ‘আমাদের গ্রামের মানুষের জীবিকার প্রধান মাধ্যম এখন শুটিংয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যোগন দেওয়া। এর মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে। নাটকের প্রয়োজনে গ্রামীণ বউ চরিত্র প্রয়োজন? ৫০০ টাকা দিলেই একটা বউ পাওয়া সম্ভব। তবে দুঃখের বিষয় হলো আমাদের গ্রামের জমিগুলো বিভিন্ন পরিচালক ও অভিনেতারা কিনে নিচ্ছেন। যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য চিন্তার বিষয়।’
অভিনেতা আব্দুল হান্নান শেলী বলেন, ‘পূবাইল ও ভাদুন গ্রামের মানুষের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তারা যথেষ্ঠ আন্তরিক। বিভিন্ন সময়ে তারা আমাদের নানা ধরনের সহযোগীতা করেন। মাঝেমধ্যে একটু আধটু ভুল-ত্রুটি হয় তাদের, আমাদেরও হয়। প্রকৃত পক্ষে এ এলাকার মানুষ বিষয়টিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সমস্যা হলো- নাটকের অভিনয়ের জন্য আমরা আসি। তবে অনেকে বেড়োতে এসে আপত্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
জনপ্রিয় অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘ভাদুন আমাদের নিজেদেরই গ্রাম। এখানকার মানুষও মনে করেন আমাদের বাড়ি এখানেই। কারণ, প্রতিদিনই তারা আমাদের এখানে দেখেন। তবে এই গ্রাম আগের মতো নাই। অনেকটা শহরের ফরমেট হয়ে গেছে। এই গ্রাম এখন ১০০% কমার্শিয়াল হয়ে গেছে। সামান্য একটা ঝাড়ুর দাম হয়তো ২০০ টাকা। ৪ ঘণ্টার জন্য সেই ঝাড়ু ভাড়া নিতে আপনার খরচ হবে ১৫০ টাকা।
‘আমি যখন ১৯৯৮ সালে ভাদুনে প্রথমবার অভিনয় করতে আসি। তখন এই গ্রামের বাসেদ ভাই শুটিং শেষে আমড়া, জাম্বুরা, কামরাঙা এগুলো দিয়ে দিতেন। কত আন্তরিক ছিলেন! আমরা শিল্পীরা সেই আগের ভাদুন দেখতে চাই।”