ওয়ালটন কোম্পানির দেওয়া নতুন দোকান আর গাড়ি পেযে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করছেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কুন্দনহাটের পঙ্গু মেইল মোজাম্মেল। ভাঙা গাড়ি আর অন্যের ভাড়া দোকানে এখন থাকেন না তিনি। ওয়ালটনের দোকান ও গাড়ির চাকা যেন ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে সেই অসহায় মোজাম্মেলের।
‘‘সাহসের প্রতীক ‘মেইল’ মোজাম্মেল শিরোনামে গত বছরের ২২ জুন একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম। ওই প্রতিবেদনে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কুন্দনহাটের বাসিন্দা দুই পা হারানো মোজাম্মেল হকের জীবনসংগ্রাম তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি দেখার পর মোজাম্মেল হককে নতুন দোকান ও চলাচলের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দেয় দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। একই বছরের ২৫ অক্টোবর বিকেলে মোজাম্মেল হকের কাছে দোকান ও গাড়ি হস্তান্তর করা হয়।
এ প্রসঙ্গে সে সময় ওয়ালটনের ডিএমডি হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘রাইজিংবিডিতে প্রতিবেদন পড়ার পর ওয়ালটন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অসহায় পঙ্গু মোজাম্মেলের জন্য নতুন দোকান ও গাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়। দোকান ও গাড়ি পাওয়ায় তার অনেক উপকার হবে।’
রোববার (২৭ মার্চ) উপজেলার কুন্দনহাট গিয়ে দেখা যায়, পাকা রাস্তার পাশে মোজাম্মেলের জন্য একটি দোকান নির্মাণ করে দিয়েছে ওয়ালটন। দোকানটি রাস্তার পাশে হওয়ায় তিনগুণ বেশি এখানে কাজ পাচ্ছেন তিনি। পূর্বের ভাড়া দোকানের চেয়ে এই দোকানে লোকজন বেশি আসছেন তাদের ভ্যান-রিকশা ও সাইলকেল মেরামত করাতে। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে এই দোকানের কর্মযজ্ঞ।
জানা গেছে, মেইল মোজাম্মেল প্রতিদিন ওয়ালটনের দেওয়া উন্নতমানের বড় এবং মজবুত অটোগাড়িতে করে দোকানে আসেন। এছাড়াও ১৫ কিলোমিটার দূরের বিরামপুর শহরে দোকানের জন্য মালামাল নিতে এই গাড়িতে চড়েই যান তিনি।
মেইল মোজাম্মেল একজন ভ্যান-রিকশা আর সাইকেলের মেকার। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি। এক সময় তিনি একজন সুস্থ সবল এবং সুঠোম দেহের অধিকারী ছিলেন। এলাকার মানুষ তাকে মেইল বলে ডাকতেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ১০ থেকে ১২ বছর আগে ডাম পায়ে তার একটা ছোট ক্ষত হয়। আর সেই ক্ষতই যেন তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়। পরে অপারেশন করে তার কোমর পর্যন্ত পা দুটো কেটে ফেলতে হয়। শেষের অপারেশনে তিনি সম্পূর্ণ ভাবে শ্রবণ শক্তিও হারিয়ে ফেলেন। সে সময় চিকিৎসা করাতে সব সম্পদ শেষ হয়ে যায় তার। কিন্তু মনোবল হারাননি তিনি। পঙ্গু অবস্থায় অন্যের দোকান ভাড়া নিয়ে জীবনযুদ্ধ শুরু করেন। বর্তমান অন্যের ভাড়া দোকান বাদ দিয়ে ওয়ালটন প্রতিষ্ঠানের দেওয়া দোকানেই চলছে তার কাজ।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, মেইল মোজাম্মেল একজন অসহায় পঙ্গু মানুষ। মানুষের দোকান ভাড়া দিয়ে থাকতে তার অনেকটা অসুবিধা হতো। তবে আমরা ওয়ালটন কোম্পানিকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানায় এমন এক পঙ্গু মানুষকে দোকান তৈরিসহ একটা গাড়ি দেওয়ার জন্য। আজ মেইল মোজাম্মেল অনেক ভালো আছেন।
মেইল মোজাম্মেলের ছেলে আতাউর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি খুবি খুশি বাবার মুখে হাসি দেখে। এসব কিছু হয়েছে ওয়ালটনের জন্য। আমি এই কোম্পানিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’
মেইল মোজাম্মেল অশ্রু ঝড়া কণ্ঠে বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আমার আর কিছুই চাওয়ার নাই। আমি ওয়ালটনের কাছে চির ঋণি। প্রতিদিন রাতে দোকান বন্ধ করার আগে আমি আল্লাহর দরবারে দোয়া করি। এছাড়াও আমি যতদিন বাঁচবো, ততদিন ওয়ালটনের জন্য দোয়া করবো।’
বিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খায়রুল আলম রাজু বলেন, ‘রাইজিংবিডিকে ধন্যবাদ জানাই, কেননা তারা অনেক অসহায় ও হতদরিদ্র এবং সমাজের বিভিন্ন সমস্যা কথা তুলে ধরছে। কুন্দনহাটের একজন অসহায় পঙ্গু ব্যক্তি মোজাম্মেলকে নিয়ে নিউজ করার পর ওয়ালটন কোম্পানি তাকে দোকান এবং গাড়ি তৈরি করে দিয়েছে। এছাড়াও মোজাম্মেলের বসতবাড়িতে ভালো কোনো ঘর নেই। আগামীতে জায়গা আছে ঘর নেই, প্রকল্প আসলে অবশ্যই তাকে একটি ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে।’
আরো পড়ুন: সেই মোজাম্মেলকে দোকান ও গাড়ি দিলো ওয়ালটন
সাহসের প্রতীক ‘মেইল’ মোজাম্মেল
পঙ্গু মোজাম্মেলের জন্য তৈরি হচ্ছে দোকান, চার্জার ভ্যান