‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু পার হওয়ার অনুভূতি অন্যরকম, যা বলে বোঝানো যাবে না’। চালুর প্রথম দিন রোববার (২৬ জুন) পদ্মা সেতু পার হতে পেরে এমনই উচ্ছ্বসিত অনুভূতি প্রকাশ করেছেন খুলনার ব্যবসায়ী জোবায়ের আহমেদ খান জবা।
জোবায়ের আহমেদ খান জবা বলেন, ফেরি, ‘লঞ্চ বা স্প্রিড বোর্ডে নয়, সরাসরি নদীর ওপর দিয়ে গাড়িতে পদ্মা পার হওয়ার বিষয়টি সত্যিই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। এ কারণে গাড়ি থেকে সেতুতে নেমে একটু হাঁটাহাঁটি, সেলফি তোলা এবং সেতুতে হাত বুলিয়ে দেখে তৃপ্তি পেয়েছি।’ বেশ কয়েক দিন ঢাকায় অবস্থান করে রোববারই সেতু পাড়ি দিয়ে খুলনায় ফিরেছেন তিনি।
শুধু ব্যবসায়ী জোবায়ের আহমেদ খান জবা একা নন, সেতু পার হতে গিয়ে এ রকম অনেকে পদ্মা সেতুতে পা রেখে তৃপ্তি উপভোগ করছেন। জীবনে প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যাত্রায় অনেকেই এভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তারা সেতু ছোঁয়ার স্মৃতি ধরে রাখতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে দিচ্ছেন পদ্মা পারাপারের ছবি।
ঢাকা-খুলনা রুটে পরিবহনের সংখ্যা বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খুলনার রয়েল মোড়ে রয়েছে ঢাকাগামী গণপরিবহনের ২০টির বেশি কাউন্টার। রোববার (২৬ জুন) সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ধারাবাহিকভাবে বাসগুলো ছেড়ে যাচ্ছে রাজধানীর উদ্দেশে।
ঢাকা-খুলনা রুটে যাতায়াতকারী আশরাফ উদ্দীন বলেন, ‘ব্যবসায়িক কাজে ঢাকা যাচ্ছি। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যাওয়ার শখ পূরণ হচ্ছে।’
আজগর আলী নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার প্রথম দিনেই ঢাকা যাচ্ছি। আগে ঢাকায় যেতে ৭ ঘণ্টার মতো সময় লাগতো। আজ হয়তো সাড়ে ৩ বা ৪ ঘণ্টা লাগবে। এটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য বড় পাওয়া।’
রোববার (২৬ জুন) ঢাকা থেকে ফিরে ফুলতলার স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী উছমান জাহাঙ্গীর অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু, সত্যিই স্বপ্নের’।
নগরীর রয়েল মোড়ের বেশ কয়েকটি পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-খুলনা রুটে সব পরিবহন ব্যবসায়ীই তাদের যানের সংখ্যা বাড়িয়েছে। সকালে খুলনা থেকে ঢাকাগামী সব যাত্রীই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
ইমাদ পরিবহনের রয়েল মোড় কাউন্টারের ম্যানেজার শরীফ আল মামুন বলেন, প্রতিদিন খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে তাদের ২৩টি বাস ছেড়ে যায়। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু উপলক্ষে আরও ২টি বাস বাড়ানো হয়েছে। আগামী দুই দিন পরীক্ষামূলকভাবে দেখা হবে। যাত্রী বাড়লে বাসের সংখ্যাও বাড়বে।
তিনি বলেন, ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে প্রথম বাস খুলনা থেকে ছেড়ে গেছে। একই সময়ে ঢাকা থেকে খুলনার উদ্দেশে বাস ছেড়ে এসেছে। ঢাকা-খুলনা রুটে যাত্রীপ্রতি ভাড়া এসিতে ৭০০ টাকা ও নন-এসিতে ৬০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
সোহাগ পরিবহনের রয়্যাল মোড় কাউন্টারের সহকারী ম্যানেজার মো. বুলবুল বলেন, ‘ঢাকা-খুলনা রুটে আগে আমাদের দুটি বাস চলাচল করতো। এখন ১৫টি বাস বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে এসি বাস ৫টি ও নন-এসি রয়েছে ১০টি। সিটপ্রতি ভাড়া এসি বাসে ১২০০ টাকা ও নন-এসি বাসে ৬০০ টাকা।’
তিনি জানান, সকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে প্রথম নন-এসি বাস ছেড়ে গেছে। এছাড়াও ৮টা ১৫ মিনিটে এসি বাস ছেড়ে গেছে। দুটি বাসের যাত্রীর সংখ্যা আগের থেকে তুলনামূলক বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি।
খুলনা থেকে রাজধানী ঢাকাতে প্রতিদিন যাতায়াত করে হাজার হাজার মানুষ। মাওয়া ঘাটের সেই চিরচেনা ফেরি পারাপারের ভোগান্তি ছাড়াই ঢাকা পৌঁছাচ্ছে খুলনার মানুষ। কারণ স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়েছে। রোববার (২৬ জুন) সকাল ৬টা থেকে সব ধরনের যান চলাচল শুরু হয়েছে বহু প্রতীক্ষিত এ স্থাপনার ওপর দিয়ে। শনিবার (২৫ জুন) দুপুর ১২টার একটু আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধন করেন।