পদ্মা সেতু পারাপারের নিয়ম মানাতে সেতুর দুই পাড়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন ও সেতু কর্তৃপক্ষ। সোমবার (২৭ জুন) থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে মোটরসাইকেল দিয়ে সেতু পারাপার।
রোববার (২৬ জুন) ভোর ৬টা থেকে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরুর পর থেকে সোমবার (২৭ জুন) দুপুর পর্যন্ত ৫১ হাজার ৩১৬টি যানবাহন সেতু পার হয়েছে। এতে সেতু কর্তৃপক্ষের আয় হয়েছে ২ কোটি ৯ লাখ টাকা।
সোমবার দুপুর পর্যন্ত সেতুর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে টোল প্লাজায় গাড়ির চাপ ছিল। পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়াও ছিল প্রাইভেটকার। মাওয়া প্রান্তে ছয়টি কাউন্টারে টোল আদায় চলছে। এরমধ্যে একটি ভিআইপি কাউন্টার। ছয়টি কাউন্টারই ম্যানুয়ালি চলছে। তাই যানবাহনের জটলা রয়েছে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে। সেতুর জাজিরা প্রান্তে সাতটি টোল কাউন্টার রয়েছে।
সকাল থেকে ফেরির মাধ্যমে মোটরসাইকেল পদ্মা নদী পারাপার করানো হচ্ছে।
সকালে বেশ কয়েকজন মোটরসাইকেল নিয়ে সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে আসলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কেউ যাতে গাড়ি থেকে সেতুতে না নামে ও ছবি না তোলে, সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে যানবাহনের জট দেখা গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক সরাসরি টোল দিয়ে সেতু পার হচ্ছে। তবে সেতু পার হতে না দেওয়ায় বেশ কয়েকজন মোটরসাইকেল চালক টোল প্লাজায় জড়ো হয়।
ঢাকা থেকে আসা সামাদ মিয়া বলেন, ‘আমি সকাল ১০টায় এসেছি। পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে দিচ্ছে না। এরপর ফেরিঘাটে যাই। সেখানে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও ফেরি না পেয়ে আবারও পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় আসি। আমি ব্যবসা করি। যশোর থেকে আমার মালামাল আসবে। এখন না যেতে পারলে মালামাল নষ্ট হয়ে যাবে।’
আরেকজন মোটরসাইকেলচালক শফিক হোসেন বলেন, ‘আমার বাবা অসুস্থ। আমাকে বাড়ি যেতে হবে। কয়েকজনের অপরাধের কারণে লাখ লাখ মোটরসাইকেল চালককে মাশুল দিতে হবে, এটা হতে পারে না। যারা অন্যায় করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।’
পিকআপ ভ্যান ভাড়া করে তাতে কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে সেতু পার হতে দেখা গেছে।
একটি পিকআপে সাত-আটজন যুবক কয়েকটি বাইক নিয়ে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার সামনে অপেক্ষা করছেন। তাদের কাছে ভাড়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান, সেতু পার করতে প্রতিটি বাইকের জন্য গুনতে হয়েছে ৪০০ টাকা করে।
মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজার ইনচার্জ ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘সকালে কয়েকজন মোটরসাইকেল চালক সেতু পার হওয়ার জন্য টোল প্লাজায় আসেন। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আজ থেকে সেতুতে মোটরসাইকেল পারাপার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই আমরা তাদের টোল প্লাজা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছি। সকালে যানবাহনের কিছু চাপ থাকলেও বিকেলে যান চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে।’
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, মোটরসাইকেল পার হতে দেওয়া হচ্ছে না। শিমুলিয়া ফেরিঘাট থেকে ফেরি দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার করানো হচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, সেতু এলাকায় মাইকিং করছে প্রশাসন। সেতুতে কোনোরকম মোটরসাইকেল চললে ও মাঝ সেতুতে কেউ যানবাহন থেকে নামলে বা ছবি তুললে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার (২৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি টোল দিয়ে সেতু পার হন। রোববার (২৬ জুন) ভোর ৬টা থেকে সেতু দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল শুরু হয়। পরে রাতে মোটরসাইকেল চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার।