বহুমুখী সংকটে পড়েছে দেশের চা শিল্প। উৎপাদনের ভরা মৌসুমে চা বাগানের ফটকে ঝুলছে তালা। ফ্যাক্টরিতে ঘুরছে না চাকা। মূলত মজুরি বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকদের গত কয়েক দিনের কর্মবিরতির কারণে অচল হয়ে পড়েছে সব চা বাগানগুলো।
এদিকে সংকট নিরসনে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিক নেতা এবং বাগান মালিক পক্ষের সঙ্গে সভায় মিলিত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও সংগঠনটির নর্থ সিলেট ভ্যালির চেয়ারম্যান নোমান হায়দার চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মালিক পক্ষের দাবি, আলোচনা চলাকালে এভাবে কাজ বন্ধ করে শ্রমিকদের আন্দোলন বেআইনি। চা উৎপাদনের ভরা মৌসুমে এ ধরনের আন্দোলন চায়ের উৎপাদন এবং গুণগত মান দুটোই কমাবে। এটা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও হুমকি।
অন্যদিকে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা বলছেন, মজুরি না বাড়ানো পর্যন্ত তারা কাজে ফিরবেন না।
চা শ্রমিক নেতারা জানান, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদ নেতাদের মধ্যে চুক্তি সই হয়। কিন্তু চুক্তির প্রায় ২০ মাস হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাই ৩০০ টাকার মজুরির দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন। শনিবার থেকে গত ৪ দিন ধরে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হয়েছে দেশের সবকটি চা বাগানে।
সিলেট বিভাগে রয়েছে মোট ১৩৯টি চা বাগান। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৩টি, মৌলভীবাজারে ৯২টি এবং হবিগঞ্জে ২৪টি। সারা দেশের মতো সিলেট বিভাগের বাগানের শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চায়ের মৌসুম শুরু হয় মার্চ-এপ্রিল মাসে। আর শেষ হয় নভেম্বর-ডিসেম্বরে। চা উৎপাদনের ভরা মৌসুম হচ্ছে জুন, জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাস। একদিকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় জেনারেটর দিয়ে চা বাগানের কারখানাগুলোর সব মেশিন ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে চায়ের গুণগত মান। চায়ের মান খারাপ হলে চা পাতা রপ্তানিও করা যাবে না। মান খারাপ চা এর প্রভাব পড়বে রপ্তানি বাজারেও। এরমধ্যে ভরা মৌসুমে শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অচল করে দিয়েছে বাগানগুলো। এতে বিপুল পরিমাণ লোকসানের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে সিলেটের লাক্কাতুরা, মালনীছড়া, দলদলি, তারাপুর চা বাগান ঘুরে দেখা গেছে, কর্মবিরতি চলায় অলস সময় পার করছেন শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, ‘আমার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত কাজে ফিরব না। বর্তমান সময়ে কীভাবে একজন শ্রমিক ১২০ টাকায় জীবন যাপন করতে পারেন। সবকিছুর দাম বাড়ে, শুধু চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ে না। মালিকরা আমাদের বলছেন, তারা ১৪ টাকা বাড়াবেন। ১৪ টাকা বাড়ালে ১৩৪ টাকা হবে। তা দিয়ে একজন শ্রমিক কোনোভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে না। আমরা ৩০০ টাকার মজুরির দাবিতে অটল থাকব।'
বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও সংগঠনটির নর্থ সিলেট ভ্যালির চেয়ারম্যান নোমান হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘চা শিল্প এখন এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। চা উৎপাদনের ভরা মৌসুমে লোডশেডিং বিপর্যয়ের ঘণ্টা বাজাচ্ছে। এর মধ্যে শ্রমিক আন্দোলন বেআইনি। মজুরি বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। এরই মধ্যে তারা আন্দোলন শুরু করেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বর্তমানে শ্রীমঙ্গলে অবস্থান করছেন। তাদের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের আন্দোলন স্থগিতের ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। দাবি দাওয়া নিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানও মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। সেই আলোচনা আগামী ২৩ আগস্ট মৌলভীবাজার অথবা ঢাকায় হতে পারে।’