সিলেট বিভাগের ১৩৯টিসহ দেশের ১৬৭টি চা বাগানে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে চলমান সংকট নিরসনে দ্বিতীয় দফা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তর।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বুধবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় বৈঠকে মিলিত হতে চা শ্রমিক, বাগান মালিক পক্ষ শ্রম ভবনে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সভায় উপস্থিত চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালীর সভাপতি রাজু গোয়ালা।
বুধবার সপ্তম দিনের মতো অর্ধেক ও পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করছেন চা শ্রমিকরা। এতে অচল রয়েছে চা উতপাদন। মালিক পক্ষের দাবি কর্মবিরতির ফলে প্রতিদিন অন্তত ৮ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলের শ্রম অধিদপ্তরে আসেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী। তিনি শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনায় বসে আন্দোলন স্থগিত করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানালে চা শ্রমিক ইউনিয়ন তা প্রত্যাখান করে আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেয়।
মঙ্গলবার বৈঠক শেষে বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী জানান, তিনি শ্রমিকদের দাবি দাওয়া শুনেছেন। ধর্মঘট প্রত্যাহারের জন্য চা শ্রমিক নেতাদের অনুরোধ করেন। প্রতিদিন ৮ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে চা বাগান মালিকদের। ৩০০ টাকা মজুরির বিষয়ে তিনি বাগান মালিকদের সঙ্গে আগামী ২৩ আগস্ট ঢাকায় মন্ত্রী ও সচিবের নেতৃত্বে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
২৩ আগস্টের আগেই বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তর আজ বুধবার (১৭ আগস্ট) দ্বিতীয় দফা সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকার শ্রম ভবনে সভায় মিলিত হয়েছেন মালিক ও শ্রমিক পক্ষ।
তবে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, তারা যে পর্যায়ে আছেন সেখান থেকে ফেরা সম্ভব না। তৃণমূল পর্যায়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে, সেখান থেকে মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা আসা ছাড়া ফেরা সম্ভব নয়।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালীর সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, `আমরা শ্রম ভবনে রয়েছি। মঙ্গলবার বৈঠকে মালিক পক্ষ না আসায় আমরা পুনরায় কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছি। সন্ধ্যায় মালিক পক্ষও বৈঠকে এসেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সভা শুরু হবে।‘
অন্যদিকে বুধবারও সিলেট ও মৌলভীবাজারের কোনো বাগানে যোগ দেননি চা শ্রমিকরা। ফলে কারখানা বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও সংগঠনের নর্থ সিলেট ভ্যালির চেয়ারম্যান নোমান হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকায় বৈঠক চলছে। আশা করছি একটা সমাধান হবে।’
শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন গত ৯ আগস্ট থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ২ ঘণ্টা করে পালন করা হয়। এরপর ১৩ আগস্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস চা শ্রমিক ধর্মঘট পালন করে। ১৪ ও ১৫ আগস্ট ২ দিন স্থগিত থাকার পর আজ ১৬ আগস্ট পূর্ণদিবস ধর্মঘট পালন করে ও বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে সমঝোতার বৈঠক হয়। চা শ্রমিকরা এখন ১২০ টাকা দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন।