লক্ষ্মীপুরে জোরপূর্বক মুখ চেপে কীটনাশক পান করিয়ে ও মাথায় আঘাত করে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী মো. হোসেনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সকালে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত হোসেন সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামের সফিক উল্যাহর ছেলে।
আদালত ও এজাহার সূত্র জানায়, হোসেনের সঙ্গে ২০০৩ সালের দিকে সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নে যাদৈয়া গ্রামের আব্দুল হাসিমের মেয়ে শিল্পি আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে রয়েছে। ২০১৬ সালের দিকে হোসেন দ্বিতীয় বিয়ে করে। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে হোসেন চট্টগ্রামে বসবাস শুরু করেন। প্রথম স্ত্রী সন্তানদের ভরণপোষণ বন্ধ করে দেন। এক পর্যায়ে তিনি শিল্পিকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে চরমনসা গ্রামের বাড়িতে আসেন।
২০১৮ সালের ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় পাশ্ববর্তী তোরাবগঞ্জ বাজার থেকে হোসেন কীটনাশক কিনেন। বাড়িতে এসে কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে স্যালাইন বলে শিল্পিকে খেতে বলে। পানি ঘোলা ও গন্ধ হওয়ায় শিল্পি তা খেতে চায়নি। এসময় তাদের মেয়ে সীমা আক্তার খেতে চাইলেও হোসেন তাকে খেতে দেয়নি। একপর্যায়ে হোসেন জোরপূর্বক মুখ চেপে শিল্পিকে তা পান করায়৷ পরে হোসেন তার মাথায় আঘাত করে। এতে কীটনাশকের প্রভাব ও আঘাত পেয়ে শিল্পির অবস্থার অবনতি হয়। অটোরিকশাযোগে হাসপাতাল নেওয়ার পথে শিল্পি মারা যায়। এ ঘটনার দুদিন পর বাবা আব্দুল হাসিম বাদী হয়ে হোসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ভিকটিমের পেটে বিষ ও মাথায় আঘাতের জখম পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তের ভিত্তিতে ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোসলেহ উদ্দিন আদালতে হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন৷ দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেন।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামি হোসেন তার স্ত্রীকে পরিকল্পনা করে হত্যা করেছে। আদালতে ঘটনাটি প্রমাণিত হয়েছে। এতে আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। আসামি পলাতক রয়েছে।