উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। ইতোমধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায়। রোববার (২৩ অক্টোবর) থেকে বাতাসসহ বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। সময়ের সঙ্গে কখনও কখনও বাতাস ও বৃষ্টি ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকাকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
হাতিয়া উপজেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন জানান, দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া মেঘনা নদীবেষ্টিত হওয়ায় এখানে যে কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রভাব বেশি পড়ে। সাধারণ অমাবশ্যা ও পূর্ণিমাতেও এখানে জোয়ারের পানি বেড়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের সময় নদী উত্তাল থাকায় তা আরও বৃদ্ধি পায়। আজ দুপুরের পর থেকে প্রায় ২০ কিমি বেগে বাতাস বইছে। সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিও হচ্ছে। বিকাল ৫টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৫ মিলি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আরও বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৭-৮ ফুট জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সেলিম হোসেন বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ৭ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নদী উত্তাল থাকায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌ-চলাচল রোববার (২৩ অক্টোবর) থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরবর্তী নির্দেশনার আলোকে প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় হাতিয়ায় ২৪২টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং ৩ হাজার ৫৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। যেসব এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেখানে সহায়তা পৌঁছে দেবো।
হাতিয়ার উপজেলার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিনাজ উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে নিঝুম দ্বীপে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে। রোববার (২৩ অক্টোবর) রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের বান্ধাখালী, মোল্লা গ্রাম, মুন্সি গ্রাম ও মদিনা গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কেন্দ্রীয় ম্যানেজিং বোর্ডের সদস্য ও নোয়াখালী ইউনিট সেক্রেটারি শিহাব উদ্দিন শাহিন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা ইউনিট কার্যালয়ে জরুরি সভায় মিলিত হয়েছি ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ সভা হয়েছে। ইউনিট ফান্ড থেকে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছি। রেডক্রিসেন্ট ও সিপিপির প্রশিক্ষিত সেচ্ছাসেবকরা ইতোমধ্যে উপকূল অঞ্চলে তাদের দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত রয়েছে।’
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, নোয়াখালীর হাতিয়া, সুবর্ণচর, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা দুর্যোগপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহিৃত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ৩ লাখ লোক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৪০১টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল টিম ১০১টি, ২৫০ মেট্রিক চন চাল, নগদ ৫ লাখ টাকা, ৭০০ কার্টুন বিস্কুট মজুত রাখা হয়েছে।