চলছে পৌষ মাস। হবিগঞ্জের পাহাড়, গ্রাম ও বস্তিতে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। ফলে সমর্থ্যবানরা যে যার মতো পারছেন শীত কাপড় কেনায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। পিছিয়ে নেই নিম্নআয়ের মানুষরাও। তারা শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গড়ে ওঠা পুরনো কাপড়ের মার্কেট থেকে কেনাকাটা করছেন।
এদিকে হাড়কাঁপানো শীতে সবচেয়ে কষ্টের মধ্যে রয়েছেন ছিন্নমূল মানুষজন। গরম কাপড়ের অভাবে কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে তাদের। এদের অনেকেই আবার সড়কের পাশে বা খোলা জায়গায় খড়কুটোয় আগুন ধরিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম কাপড় বিক্রির ধুম পড়েছে হবিগঞ্জ শহরে। বিত্তবানরা গরম কাপড় কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন বড়বড় মার্কেটগুলোতে। এছাড়া উপজেলা শহরের বিভিন্ন হাট বাজারে গরম কাপড় বিক্রি হচ্ছে।
জেলা শহরে আজমিরীগঞ্জ থেকে শীতবস্ত্র কিনতে আসা কাজল মিয়া বলেন, ‘শীত আর শীত। শরীরে ঠান্ডা লাগানো যাবে না। ঠান্ডায় বিরাট ক্ষতি হতে পারে। শীত থেকে রেহাই পেতে গরম কাপড় কিনতে এসেছি।’
বানিয়াচংয়ের ভিংরাজ মিয়া বলেন, ‘অন্য বছর গুলোর চেয়ে এবার শীত বেশি পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। শীতবস্ত্রের দামও এবার বাড়তি। তারপরও শীত থেকে বাঁচতে ৬০০ টাকায় শীতের কাপড় কিনেছি।’
চুনারুঘাটের দেউন্দি চা বাগানের বাসিন্দা প্রতীক থিয়েটার সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘বাগানে শীত জেঁকে বসেছে। এ সময়ে দরিদ্র শ্রমিকরা দুর্ভোগে পড়েছেন। তাদের প্রয়োজন গরম কাপড়।’
গরম কাপড়ের বিক্রেতা ফজলু মিয়া, কাজল মিয়া, আব্দুল আলী বলেন, শীতের গরম কাপড় বিক্রি বেশ জমে উঠেছে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা এসে কাপড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসার স্বার্থে কমলাভে গরম কাপড় বিক্রি করতে হচ্ছে।’ হবিগঞ্জ জেলার বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে পাহাড়। শত শত বছর ধরে পাহাড়ে বসবাস করে আসছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায় ও চা-শ্রমিক এবং ছিন্নমূল লোকজন। পাহাড়ি বাসিন্দারা পতিত জমিতে লেবু, কাঁঠাল, সবজি, কমলা, মাল্টাসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে অর্থ উপার্জন করেন। আর পাহাড়ের চা বাগানের বাসিন্দারা চা-পাতা উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
পরিবেশপ্রেমিক আব্বাস উদ্দিন তালুকদার বলেন, গ্রামগঞ্জে শীতের প্রকোপ যেমন, তার চেয়ে পাহাড়ে বেশি শীত। ফলে পাহাড়িদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এতে করে তারা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। পাহাড়িরা এখন শীতবস্ত্রের অপেক্ষায়। সেই সাথে গ্রাম ও বস্তির ছিন্নমূল লোকজনও শীতবস্ত্রের অভাবে দুর্ভোগে রয়েছেন। দ্রুত তাদের প্রয়োজন শীতবস্ত্র দেওয়া উচিত সরকারের।’
জেলার চুনারুঘাট উপজেলার কালেঙ্গা পাহাড়ের কৃষ্ণছড়া পুঞ্জির হেডম্যান উমেশ খাড়িয়া ও কালিয়াবাড়ি পুঞ্জির হেডম্যান বিনয় দেববর্মা বলেন, পাহাড়ে শীত বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় শীতবস্ত্রের খুবই অভাব। এ কারণে শিশু, নারী ও বয়স্করা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, কালিয়াবাড়ি ছাড়াও চুনারুঘাট, বাহুবল ও মাধবপুর উপজেলার পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে নৃ-গোষ্ঠী পুঞ্জি। এসব পুঞ্জিতেও বসবাসকারী দরিদ্রদের জন্য শীতবস্ত্র প্রয়োজন।
দেউন্দি বাগানের বাসিন্দা চা শ্রমিক ভাসানী চৌহান ও কমলা গোয়ালা বলেন, প্রচন্ড শীত। এ কারণে শরীরটা ভালো না। এই শীতে সকালে কাজে যেতে হচ্ছে। এর মধ্যে আবার শীতবস্ত্র নেই। আমার মতো অনেক শ্রমিকের শীতবস্ত্রের অভাব রয়েছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন জেলা শাখার সাবেক সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, শহরে শীতের তীব্রতা তেমন না থাকলেও পাহাড়, গ্রাম ও বস্তিতে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। ওইসব স্থানের দরিদ্র বাসিন্দাদের কাছে দ্রুত শীতবস্ত্র পৌঁছাতে হবে। শুধু সরকারিভাবে নয় সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র নিয়ে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।