রাজশাহী শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর ওপারের একটি গ্রামের নাম চর মাজারদিয়াড়। এই চরের বাসিন্দারা এখনো জানেন না যে, দেশে করোনার চতুর্থ ডোজের টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে। ফলে এই চরের কেউ চতুর্থ ডোজের টিকা নিয়েছেন, এমন কোনো ব্যক্তিকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
করোনার আতঙ্ক কমে এলেও সংক্রমণ এখনও থামেনি। সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশে করোনার চতুর্থ ডোজ টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু পদ্মা নদী পেরিয়ে সেই খবরটি পৌঁছায়নি চর মাজারদিয়াড়ে।
সম্প্রতি ওই চরে গিয়ে নানা বয়সী মানুষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চর মাজারদিয়াড় স্কুল মোড়ের এক দোকানে বসে ছিলেন আশির উদ্দিন মণ্ডল (৮৬)। তিনি বলেন, ‘পাশের স্কুলেই তৃতীয় ডোজ পর্যন্ত করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমি তৃতীয় ডোজের টিকা নিয়েছি। কিন্তু চতুর্থ ডোজের টিকা দেওয়া যে শুরু হয়েছে তা আমার জানা নেই।’
আশিরের সঙ্গে বসে থাকা জয়নাল আবেদিন (৭০) বলেন, ‘টিক্যামিক্যা যা ছিল সব সারা হয়্যা গেলছে।’ কয় ডোজ টিকা নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘তিনড্যা।’ আরও এক ডোজ দেওয়া হচ্ছে জানালে জয়নাল বলেন, ‘ল্যাগলে দিব, এখুনও তো জানি ন্যা।’
চর মাজারদিয়াড়ে তৃতীয় ডোজ পর্যন্ত টিকা দেওয়া হলেও এবার চতুর্থ ডোজের ব্যবস্থা করা হয়নি। চরের মানুষকে চতুর্থ ডোজ নিতে বিশাল পদ্মা পাড়ি দিয়ে যেতে হবে পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
এবার উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও সিটি করপোরেশন এলাকার নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র কিংবা বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল থেকে তারা টিকা নিতে পারবেন। এসব কেন্দ্রে শুরুতে শুধু ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের চতুর্থ ডোজ টিকা দেওয়া হচ্ছিল। তবে টিকা নেওয়ার মানুষ কম আসছেন বলে এখন ১৮ বছরের বেশি বয়সের সবাইকে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
চরমাজারদিয়াড়ে একটি বাড়ির সামনে ঘরের চালা তৈরির কাজ করছিলেন হুজুর আলী। বয়স ৬০ পেরিয়েছে তার। তিনি বলেন, ‘আমার টিকা ল্যাওয়া হয়েছে দুইটা। আমারেহ ইসকুলিই দিয়্যা গেলছে। তৃতীয় ডোজ দেওয়ার বেলায় গেনু, কিন্তু ইংজ্ঞাশুন শ্যাষ। বুলল, পরে যখুন আনব, ডাইক্যা লিব। কিন্তু টিকা লিয়্যা আর আসেইনি, আমারও তৃতীয় ডোজ হয়নি।’
চতুর্থ ডোজ দেওয়া হচ্ছে জানেন কি না জানতে চাইলে হুজুর বলেন, ‘আমি তা-ও জানি না। কই, গোটা চরেই তো জানে না কেহু।’
হুজুরের সাথে কাজ করছিলেন মো. উজ্জ্বল (৩১)। বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে তিনি টিকা নিয়েছেন দুই ডোজ। তৃতীয় ডোজ নেওয়া হয়নি কেন, জানতে চাইলে জানালেন, যাওয়া হয়নি। উজ্জ্বলও জানালেন, চতুর্থ ডোজ টিকা দেওয়া হচ্ছে এ খবর তারও জানা নেই।
পদ্মার এপার থেকে চরে তাবলিগে গিয়েছেন গোলাম রাব্বানী। মসজিদেই থাকছেন এক মাসের বেশি সময় ধরে। গোটা গ্রাম ঘুরছেন। তিনিও শোনেননি চতুর্থ ডোজের কথা। রাব্বানী বলেন, ‘আমার বাড়ি গোদাগাড়ী উপজেলার বারোহাটি গ্রামে। সেখানেই আমি তিন ডোজ পুরা করেছি। চতুর্থ ডোজ দেওয়া হচ্ছে এটা আমি শুনিনি। প্রচারের জন্য কোনো ঘোষণা থাকলে মসজিদেই বলে দেওয়া হয় মাইকে বলার জন্য। এখানে সেটাও হয়নি।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মো. ফারুক বলেন, ‘চতুর্থ ডোজ টিকার ব্যাপারে তো সবারই জানার কথা। আসলে সংক্রমণ কম বলে এখন টিকা নেওয়ায় মানুষের আগ্রহও কম। তাছাড়া রাজশাহীর ৫২ শতাংশ মানুষ তৃতীয় ডোজ পর্যন্ত নিয়েছেন। চতুর্থ ডোজও পর্যায়ক্রমে সবাই নিয়ে ফেলবেন।’