শেরপুর জেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল জুড়ে এবার বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। শীতের এই সময়ে কৃষকদের ব্যস্ত থাকার কথা ক্ষেত থেকে বেগুন উঠানোর কাজে। কিন্ত দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকরা পড়েছেন লোকসানের মুখে। বর্তমান পাইকারি বাজারে প্রকার ভেদে ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করছেন তারা। আর তাই বাধ্য হয়ে অনেক কৃষকই গো-খাদ্য হিসেবে বেগুন ব্যবহার করছেন।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা ভালো দাম পেলেও এখন ফলন ভালো হওয়ায় বেগুনের দাম কমে গেছে।
শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর, পয়েস্তির চর, কুসুম হাটি, চর পক্ষিমারি ইউনিয়নে সবুজ ক্ষেত জুড়ে দেখা যায় শুধু বেগুনের আবাদ। বাম্পার ফলনের পর খুশিতে ভরে গিয়েছিল এখানকার কৃষকের বুক। কৃষকরা আশা করেছিল এবার দুই পয়সা লাভের মুখ দেখবেন তারা। অজ্ঞাত কারণে দাম কমে যাওয়ায় কৃষকের সেই মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে। ভরা মৌসুমে বেগুনের দাম কমে যাওয়ায় এখন খরচ উঠানোই দায় হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।
কৃষকরা বলেছেন, মৌসুমের শুরুতে বেগুনের দাম মণ প্রতি ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা পেলেও এখন তা কমে এসেছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়।
এদিকে, কৃষকের জমি থেকে বেগুন কিনে ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে বিক্রি করেন যেসব পাইকারি ব্যাবসায়ী তারাও বলেছেন, বাজার পড়ে যাওয়ার কারণে এই এলাকা থেকে প্রতিদিন যেখানে ৫০ থেকে ৬০ ট্রাকে বেগুন যেতো বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩০টিতে। এছাড়া আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম কমেছে খাদ্য পণ্যটির।
কৃষকের কাছ থেকে মাপে বেশি বেগুন নেওয়ার কথা স্বীকার করে ব্যাবসায়ীরা বলেন, পোকা-মাকড় থাকায় কৃষকের সম্মতিতে বেশি নেওয়া হয়।
হাটে সবজি বিক্রি করতে আসা সদর উপজেলার কামারচর গ্রামের মেঘ আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যত লস (ক্ষতি) সব চাষির। একদিকে দাম কম। অন্যদিকে আবার পাইকার ও হাট ইজারাদারদের চাপ রয়েছে। তাদের সবজি প্রতি মণে বাড়তি ২ থেকে ৬ কেজি পর্যন্ত ফাউ (বিনামূল্যে) দিতে হয়। অর্থাৎ কৃষকের সবজি ৪৫-৪৬ কেজিতে মণ হয়। এটা দেখার কেউ নেই।’
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. সুকল্প দাস বলেন, ‘শেরপুর জেলায় চলতি মৌসুমে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার চরাঞ্চলেই ২৫০০ হেক্টর জমিতে বেগুনের আবাদ হয়েছে। উপজেলার পশ্চিমের মাটি পলি তাই এসব অঞ্চলে রবি শস্যের ফলন ভালো হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানকার কৃষকরা অত্যান্ত পরিশ্রমী এবং চাষাবাদে তারা সরকারের বিভিন্ন কৃষি বিষয়ক সেমিনারে অংশ গ্রহণ করে থাকেন। বেগুন চাষ অধিক লাভজনক হিসেবে কৃষকদের কাছে পরিলক্ষিত হয়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবং সমানুপাতিক হারে চাহিদা কম হওয়ায় দাম কম পাচ্ছেন কৃষকরা।’