নগর ও জেলা যুবলীগের সম্মেলনকে ঘিরে খুলনা নগরীর অধিকাংশ বিলবোর্ড ছেয়ে গেছে প্যানা-পোস্টারে। এখন চলছে তোরণ নির্মাণের তোড়জোড়। আবার কেউ কেউ পদ পেতে ছুটছেন সংগঠনের নীতি নির্ধারকদের দ্বারে দ্বারে। সবমিলিয়ে খুলনা জেলা যুবলীগে নতুন এক চমকের অপেক্ষা করছেন তৃনমূলের কর্মীরা।
আগামী ২৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার খুলনা নগরীর শেখ রাসেল টেনিস কমপ্লেক্স চত্বরে নগর ও জেলা যুবলীগের সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে।
দীর্ঘদিন পর সম্মেলন ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের যুবসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মহানগর নেতৃত্বেও বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত হলেও জেলা কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে চলছে শীতল লড়াই।
যুবলীগের সাবেক নেতারা ছাড়াও এ পদ দুটিতে উঠে এসেছে ছাত্রলীগের একাধিক সাবেক নেতাদের নাম। আর পদ প্রত্যাশীদের প্রচার-প্রচারণায় নগরীর অধিকাংশ বিলবোর্ডগুলো ছেয়ে গেছে।
প্রায় দু’বছরেরও বেশি আগে তোড়জোড় শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত আর সম্মেলন হয়নি খুলনা নগর ও জেলা যুবলীগের। এমন কি নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত নেওয়া হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মেলেনি। ওই সময়ে মহানগর কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একক প্রার্থী হলেও জেলায় দুটি পদ চেয়েছিলেন ১৭ জন। নগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একক প্রার্থী যথাক্রমে বর্তমান আহবায়ক সফিকুর রহমান পলাশ ও বর্তমান যুগ্ম আহবায়ক শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন। ফলে আসন্ন সম্মেলনে নগর নেতৃত্ব অনেকটা নিশ্চিত হলেও জেলায় চমকের সম্ভাবনা রয়েছে। এমন কী জীবন বৃত্তান্ত জমা দেওয়ার বাইরের কেউ জেলার নেতৃত্বে আসা অসম্ভব নয় বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ।
খুলনা জেলায় সভাপতি পদে ছয় জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১১ জন জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। সভাপতি পদ প্রত্যাশীরা হলেন- বর্তমান যুবনেতা অজিত বিশ্বাস, যুবনেতা সরদার জাকির হোসেন, খুলনা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান চৌধুরী রায়হান ফরিদ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাদীউজ্জামান হাদী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আরাফাত হোসেন পল্টু ও জসিম উদ্দিন বাবু।
সাধারণ সম্পাদক প্রত্যাশী ১১জনের মধ্যে রয়েছেন- যুবনেতা এবিএম মরুজ্জামান, মাহফুজুর রহমান সোহাগ, সাবেক ছাত্রনেতা দেব দুলাল বাড়ই বাপ্পী, তসলিম হুসাইন তাজ, মো. মুশফিকুর রহমান সাগর, মো. আবু সাঈদ খান, বর্তমান যুবনেতা জলিল তালুকদার, মো. কামরুজ্জামান মোল্লা, হারুন আর রশিদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ছাত্রলীগ জেলা সভাপতি মো. পারভেজ হাওলাদার।
পদ প্রত্যাশী এসব নেতাদের প্যনা পোস্টার ও প্রচারণায় এখন ব্যস্ত মহানগরী খুলনা। নেতারা যোগাযোগ রাখছেন উপজেলা পর্যায়ের সম্ভাব্য কাউন্সিলরদের সঙ্গে। তবে সব ছাপিয়ে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নির্ধারিত হতে পারে কে কে হবেন আগামী দিনের খুলনা যুবলীগের কান্ডারি। যুবলীগের বর্তমান নেতৃত্ব নাকি ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা এ পদে আসবেন- তা অনেকটাই নির্ভর করছে তাঁদের ব্যক্তিগত আমলনামার ওপর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংগঠনটির এক প্রভাবশালী নেতা জানান, জেলায় ১৭ জনের নাম এসেছে। সেগুলোর বিবেচনা করা হচ্ছে। আবার সংগঠনের জন্য অপরিহার্য, কিন্তু জীবন বৃত্তান্ত জমা দেননি- তাদের বিষয়গুলোও মাথায় রাখা হচ্ছে। এই নেতা বলেন, সামনে সিটি করপোরেশন ও জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচনে যুবলীগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরীক্ষিত নেতারাই আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবেন।
জেলা যুবলীগের বর্তমান নেতা সভাপতি পদ প্রত্যাশী অজিত বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় আমাদের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। দায়িত্ব পেলে ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। সংকটকালে সংগঠনের জন্য কাজ করেছি। আগামীতে সেই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাদীউজ্জামান হাদী বলেন, ছাত্র রাজনীতি থেকে জনপ্রতিনিধি হয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। দলের জন্য সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি। যুব সংগঠন গড়তে কাজ করার সুযোগ চাই।
যুবলীগ নেতা ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী মাহফুজুর রহমান সোহাগ বলেন, কারা সংগঠনের জন্য কাজ করছেন, কর্মীরা ভাল জানেন। নেতৃত্ব পেলে যুবলীগকে আরো শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করা হবে।
জেলায় নেতৃত্ব প্রত্যাশী ছাত্রলীগের খুলনা কমিটির সাবেক সভাপতি আরাফাত হোসেন পল্টু বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি থেকে বিদায় নিয়েও যুবলীগ ও দলের জন্য কাজ করছি। আগামীতেও কাজ করে যেতে চাই। নিজেকে নেতা নয়, একজন কর্মী হিসেবে সংগঠন গড়ার কাজে থাকতে চাই।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ২৫ মে জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন ও ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মহানগের দ্বিতীয় দফায় মহানগর আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। দলীয় রাজনীতিতে মহানগর কমিটি সক্রিয় থাকলেও দীর্ঘদিন সম্মেলনের অভাবে নিস্ক্রীয় জেলা যুবলীগ। ২০২১ সালে ২২ জানুয়ারি সম্মেলন ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। সর্বশেষ ২০০৩ সালের ২৫ মে খুলনা জেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে কামরুজ্জামান জামাল সভাপতি ও আক্তারুজ্জামান বাবুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর প্রায় ৫/৬ মাস পর ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়। দীর্ঘদিন সম্মেলন বা কাউন্সিল না হওয়ায় জেলা যুবলীগের কার্যক্রম অনেকটা স্থবির। ৯টি উপজেলা ও ৬৮ ইউনিয়নে কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ।
অপরদিকে নগর যুবলীগে ২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি নগর যুবলীগের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। ওই কমিটিতে অ্যাডভোকেট সরদার আনিসুর রহমান পপলুকে আহবায়ক এবং মনিরুজ্জামান সাগর ও হাফেজ মো. শামীম যুগ্ম-আহবায়ক ছিলেন। দ্বিতীয় দফার আহবায়ক কমিটিতে আহবায়ক হয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা শফিকুল ইসলাম পলাশ। আর যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন। মূলত যুবলীগের নগর কমিটিই খুলনার রাজনীতিতে ব্যতিক্রম ধারার সূচনা করে।
খুলনা মহানগর ও জেলা যুবলীগের সম্মেলন সফল করা লক্ষে খুলনা মহানগর ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যৌথ কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় দলীয় কার্যালয় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন খুলনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শেখ মো. আবু হানিফ। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আসাদুজ্জামান রাসেলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের আহবায়ক মো. সফিকুর রহমান পলাশ।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও মহানগর যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন।