রাজশাহীতে একটি আপত্তিকর ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভিডিওতে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের মুখ দেখা যাচ্ছে। ডাবলু সরকার দাবি করেছেন, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির মুখ তার, কিন্তু শরীরের নিচের অংশ তাঁর নয়। এটি এডিট করা বলেও দাবি তাঁর।
তবে এই ভিডিও নিয়ে রাজশাহীতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। উঠেছে নিন্দার ঝড়। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন দলের নেতাকর্মীরাও। তারা বলছেন, ভিডিওটি সত্য নাকি মিথ্যা সেই বিষয়ে যথাযথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
এদিকে, ভিডিওটি মিথ্যা দাবি করে থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন ডাবলু সরকার। মামলায় আসামি হিসেবে কারও নাম নেই। তবে ভিডিওটির ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ করা একটি অনলাইন নিউজপোর্টালে বিষয়টি জানতে পেরেছেন বলে ডাবলু সরকার এজাহারে উল্লেখ করেছেন। গত শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) নগরীর বোয়ালিয়া থানায় মামলা করা হয়।
গত শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে ৩ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের এই ভিডিও নেতাকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ছড়াতে থাকে। শব্দহীন এই ভিডিওটি দেখে মনে হচ্ছে, এটি একটি ভিডিওকলের ভিডিও। যেখানে অপরপ্রান্তে যিনি ছিলেন তার স্থানটি ঢেকে দেওয়া হয়েছে। আর এ প্রান্তের ব্যক্তি অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত। এ ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর নেতাকর্মীরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আসলে ব্যাপারটা এমন যে প্রশ্ন করলে উত্তর দিতেই বিব্রত হচ্ছি। সত্যি-মিথ্যার ব্যাপারটা আলাদা। প্রমাণ তো পরের বিষয়, কিন্তু ঘটনার পরে সবাই বিব্রত হচ্ছি। সাংবাদিকদের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটলে সাংবাদিক হিসেবে আপনিও বিব্রত হতেন। এখন রাজনীতিতে এমন ঘটনায় আমরাও বিব্রত হচ্ছি।’
নগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জিয়া আজাদ হিমেল বলেন, ‘আমি ঢাকায় ছিলাম। ভিডিওটা দেখিনি। তবে যেটা শুনেছি, সেটা খুবই অস্বস্তিকর। আমাকে দুই একজন সাংবাদিক বলেছে। পত্র-পত্রিকাতেও দেখেছি। আমি জিনিসটা দেখিনি, তাই আমার ধারণা নেই।’
এই ভিডিওটির বিষয়টি এখন রাজশাহীর মানুষের মুখে মুখে। তাই প্রশ্নবানে জর্জরিত হচ্ছেন দলীয় অনেক নেতা। এ চার দিনে ভিডিও নিয়ে আলোচনা শুধু মহানগরে সীমাবদ্ধ থাকেনি। আলোচনা-সমালোচনা ছড়িয়েছে গ্রামপর্যায়েও। উঠেছে নিন্দার ঝড়। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘যেটা দেখেছি, সেটা ন্যক্কারজনক। ব্যাপারটা কি জানতে অনেকে গ্রাম থেকে ফোন করছে। আমি আশা করব, এটা যেন মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তা না হলে এটা দলের জন্য বিব্রতকর।’
ভিডিওটির বিষয়ে জানতে চাইলে সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এটা তো ফেক ভিডিও। একটা ফেক ভিডিও ছেড়েছে। আমি মামলা করেছি। তদন্তের সাপেক্ষে সত্যিটা বের হয়ে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘এটা ষড়যন্ত্র করে করা হয়েছে। এটা আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলতেও পারে। আবারও সত্যিটা বের হয়ে আসলে আমি সম্মানিতও হতে পারি। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই বিষয়টা দেখবে।’
নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহরাওয়ার্দী বলেন, ‘ডাবলু সরকার মূলত অনলাইন পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তবে মামলার তদন্তের সময় ধীরে ধীরে সবই চলে আসবে। ভিডিও সত্য নাকি বানানো সেটাও জানা যাবে। আমরা তদন্ত করব।’
আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমার কাছে এই ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আসেনি। রাজশাহীতে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা আছে। প্রেসিডিয়াম মেম্বার লিটন ভাই, আখতার জাহান আপা, ঠাণ্ডু ভাই আছেন। তারা কেউই কেন্দ্রে এখনো কিছু বলেননি। ঘটনা সত্যি নাকি মিথ্যা আমি জানি না।’
তিনি বলেন, ‘আমিও শুনেছি। তবে ডাবলু সরকার বা দলের কারও সঙ্গে এই ব্যাপারে কোনো কথা আমার হয়নি। ডাবলু সরকার মামলা করেছেন, সেটা শুনেছি। এখন পুলিশ তদন্ত করে যা রিপোর্ট দেবে সেটার উপর নির্ভর করবে সবকিছু। ঘটনা সত্যি হলে এক রকম, মিথ্যা হলে আরেক রকম ব্যাপার হবে। এটা ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রও হতে পারে।’
দল এ বিষয়টি তদন্ত করবে কি-না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘আওয়ামী সভাপতি বরাবর কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টা কেন্দ্র দেখবে। এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি।’