ঠাকুরগাঁওয়ে এক গরিব পরিবারকে উচ্ছেদ করতে বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাত্তার নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। আগুন দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়া সত্যতার প্রমাণ নিশ্চিত হলেও মামলা হচ্ছে না থানায়।
সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে এমনি অভিযোগ নিয়ে ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবে হাজির হন ভুক্তভোগী খাদেমুল।
খাদেমুল বলেন, ঘটনার ৫ দিন অতিবাহিত হলেও মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেয়নি ঠাকুরগাঁও সদর থানা।
জানা গেছে, সদর উপজেলা জগন্নাপুর পুর হাজীপাড়ায় ক্রয়কৃত ১২ শতক জমিতে বসবাস খাদেমুলের। তবে বাবার বিক্রি করা সেই জমির টাকা ফিরিয়ে দিতে চান সাত্তার। প্রস্তাবে রাজি না হলে বিবাদের সূত্রপাত হয় খাদেমুল ও সাত্তারের।
এই বিষয়ে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্রসেনের আদেশে তদন্তের কাজে নামেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন। একপর্যায়ে মিমাংসার জন্য দুইপক্ষকে নিয়ে বসার ব্যবস্থা হয়।
তবে নিজেকে যুবলীগের নেতা দাবি করে পুলিশের সামনেই ভুক্তভোগী খাদেমুলকে মারধর করেন শহীদ বাবু। সেই বৈঠকে বিষয়টি মিমাংসা না হওয়ায় পরদিন বিকেল বেলা উচ্ছেদ অভিযানের নামে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় খাদেমুলের বাসায়। জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি শহীদ বাবুর বিরুদ্ধে এই ঘটনার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ উঠে। ঘটনার দিন বিকেলেই বিষয়টি নিয়ে সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন খাদেমুল।
সরেজমিনে ভুক্তভোগী খাদেমুলের বাড়িতে গেলে ঘর পুড়ে পাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমানের (৬৬) কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাত্তার ও তার পরিবারের লোকজনের ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলে না। যেদিন আগুন দিয়েছিল সেদিন আমি পাশেই ছিলাম। বাধা দিয়েছিলাম। কেউ কারো কথা শুনেনি। খাদেমুল প্রকৃত সেই জমির মালিক। মৃত সোলামান সরকার তার কাছে জমি বিক্রি করে গেছেন। ওই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানো দরকার।
ভুক্তভোগী খাদেমুল বলেন, ‘আমার পরিবারের বাড়ি ভাঙচুর, সদস্যদের মারধর ও আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হইছে। সবাই সত্যটা জেনেছে। তবুও মামলা নিচ্ছে না পুলিশ। আমি এখন তার কাছে যাব। আমাকে কে রক্ষা করবে। আমি কী এদেশের নাগরিক নই। আমাদের কী বেঁচে থাকার অধিকার নেই।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত যিনি তার বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঠাকুরগাঁও নাগরিক সমাজের নেতা আবু মহিউদ্দন বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জমি দখলকে কেন্দ্র করে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই ভিডিওতে দেখা গেছে একটি ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। এক নারী প্রতিবাদ করলে তাকেও মারপিট করছে। কিন্তু ভুক্তভোগী নাকি থানায় অভিযোগ করলেও এখন পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলাবাহিনী বিষয়টি আমলে নেয়নি। বিষয়টি দুঃখজনক। বিচারের আশ্রয়স্থল হচ্ছে পুলিশ। পুলিশ যদি সেই সহযোগিতা না করে সমাজের অসহায় মানুষগুলো কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লিটন বলেন, ওই জমি নিয়ে একাধিক বার বৈঠকে বসা হয়েছে। কিন্তু কেউ ছাড় দিতে রাজি না। তাই আগুন ঘটনা ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ সেই সব লোকজনকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে পারে।
ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, অভিযোগটি মামলায় রূপান্তর হয়নি। কারণ তারা স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করবে বলে জানিয়েছে। মিমাংসা না হলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে মামলা রেকর্ড করা হবে।
ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাদেমুলের জমির সমস্যার সমাধানের জন্য গত ৪ মাস আগে সহযোগিতা করতে সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। দোষী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।