সারা বাংলা

টাঙ্গাইলে জমে উঠেছে শাড়ির বাজার, ২০০ কোটি টাকা ব্যবসার সম্ভাবনা 

করোনা ও ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের পর আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ির ব্যবসায়ীরা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই টাঙ্গাইল শাড়ির দোকানে ভিড় করছে ক্রেতারা। সব মিলিয়ে টাঙ্গাইলে তাঁত শাড়ির রাজধানী খ্যাত পাথরাইলে ঈদের বাজার জমে উঠেছে। 

সরাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন পাইকারি শাড়ি কিনতে পাথরাইলে। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে এখানকার শাড়ি। 

ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছে ঈদে ২০০ কোটি টাকার টাঙ্গাইলের শাড়ি বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। 

এদিকে টাঙ্গাইলের শাড়ির চাহিদা বাড়ায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন তাঁত শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টরা। দিন রাত পরিশ্রম করে তারা শাড়ি প্রস্তুত করছে এক একটি শাড়ি। তবে এবার মাঝারি দামের শাড়ির চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

টাঙ্গাইল শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দক্ষিণে দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়ন। জেলার বিভিন্ন স্থানে টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি হলেও এই ইউনিয়ন টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি ও ব্যবসার মূল কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। 

স্থানীয় শাড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, রোজা শুরু হওয়ার দুই মাস আগে থেকেই শাড়ি তৈরি করে মজুদ করেছেন তারা। এবার হাফ সিল্ক, মিক্স কটন, পিওর সিল্ক ও সুতি শাড়ি বেশি তৈরি হয়েছে। রোজা শুরু হওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন পাইকারি শাড়ি কিনতে। পাইকারি বিক্রির চাপ অনেকটা কমে এসেছে। এখন বেশির ভাগ ব্যবসায়ী দ্বিতীয় দফা শাড়ি নিতে আসছেন। 

শাড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, ৭০০-৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫-২০ হাজার টাকা দামের শাড়ি ঈদ উপলক্ষে তৈরি করা হয়েছে। তবে মধ্যম দামের শাড়ির চাহিদা এবার বেশি। ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা দামের শাড়িগুলো বেশি চলছে।

শনিবার (১৫ এপ্রিল) পাথরাইলে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন তাঁতি বাড়িতে তাঁতের কারিগর ও এর সঙ্গে সম্পৃক্তরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাঁতি বাড়িতেও পাইকারি ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়ছে। পাথরাইল এলাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারি এবং খুচরা ক্রেতরা এসেছেন।

তাঁতের কারিগর সজিত রায়, রহিম মিয়া ও রেজাউল মিয়া বলেন, গত কয়ের বছরের তুলনায় এ বছর ঈদ ও পহেলা বৈশাখে টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা বেড়েছে। এতে আমাদের কাজও বাড়ছে। তবে আমাদের বেতন না বাড়ায় পরিশ্রম অনুযায়ী মজুরি পাচ্ছি না। তাঁত মালিকদের কাছে আমরা বেতন বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।

শহরের পশ্চিম আকুর টাকুর পাড়া থেকে আসা গৃহবধূ হালিমা বেগম বলেন, ঈদ উপলক্ষে চারটি শাড়ি ও দুটি থ্রি-পিস কিনেছি। গরমে কারণে সুতি সুঁতার শাড়ি কিনেছি। ঈদ হলেও দাম তেমন বেশি নেয়নি।

অপর ক্রেতা কামরুল হাসান বলেন, আমি মা ও দুই বোনের জন্য তিনটি শাড়ি কিনেছি। শাড়িতেই আমাদের বাঙালি নারীদের ভাল দেখায়। ঈদে শাড়ি হলে আনন্দও বেড়ে যায় বাড়ির নারীদের।

ভারতের পূর্ব বর্ধমান থেকে আসা ক্রেতা সজিত বসাক বলেন, আমাদের বর্ধমানে টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ির চাহিদা ব্যাপক। পূজা ও ঈদকে কেন্দ্র করে এ চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। পাথরাইল থেকে শাড়ি নিয়ে বর্ধমানে বিক্রি করবো। অন্য বছরের তুলনায় এ বছরে শাড়ি প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা দাম কমেছে। এছাড়াও আস্তে আস্তে তাঁত আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

পাথরাইলের শাড়ি ব্যবসায়ী ও টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাট্রিজের পরিচালক পলাশ চন্দ্র বসাক বলেন, করোনার মধ্যে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। ঈদকে কেন্দ্র করে আমরা আমাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। তাঁতিরাও এর সুফল পেয়েছেন। আমাদের উৎপাদিত শাড়ি ভারত, আমেরিকা, কানাডা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। 

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও টাঙ্গাইল শাড়ির ব্রান্ড। তিনি সব সময় টাঙ্গাইলের শাড়ি পড়েন। পাথরাইলে একটি তাঁতপল্লী হলে আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক ভাল হতো। এতে সারা পৃথিবীব্যাপী বাংলাদেশের সুনাম সৃষ্টি করা যেত।

শাড়ি ব্যবসায়ী খোকন বসাক জানান, সব শ্রেণির ক্রেতার কথা মাথায় রেখেই ঈদের শাড়ি তৈরি করা হয়েছে। ৭০০/৮০০ থেকে ১৫/২০ হাজার টাকা দামের শাড়ি রয়েছে। তবে তৈরি করা শাড়ির মধ্যে ১৫০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা দামের শাড়ির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। 

টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, এ বছর আশার আলো নিয়ে আমরা আসছি। খুচরা বাজারে টাঙ্গাইল শাড়ি ভালো বিক্রি হচ্ছে। টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপাদন ও বিক্রির সঠিক পরিমাণ দেওয়া কঠিন। তারপরও ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ২০০ কোটি টাকার শাড়ি বাজারে ছাড়া হয়েছে। আমরা আশা করছি সব শাড়ি বিক্রি হবে। দেশি পণ্য ব্যবহার করে ঈদ আনন্দ উপভোগ করার আহ্বান জানাচ্ছি আমি।