আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ইতোমধ্যে প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিয়েছে। হলফনামা থেকে পাওয়া তথ্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আজমত উল্লা খানের আয় জাহাঙ্গীর আলমের থেকে বেশি। তবে স্থাবর সম্পদ অর্থাৎ জমি ও দালান কোঠার দিক দিয়ে জাহাঙ্গীর এখনও অনেকটাই এগিয়ে।
গত নির্বাচনে হলফনামায় জাহাঙ্গীর মোট জমি দেখিয়েছিলেন ১ হাজার ৪১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে অকৃষি জমি ছিল ৩৩ দশমিক ৭১২৫ শতাংশ। বাকি সব ছিল কৃষি জমি। এবারের হলফনামায় মোট জমির কথা উল্লেখ নেই। শুধু অকৃষি জমির কথা বলা আছে। সেটি দাঁড়িয়েছে ৮১৫ দশমিক ২১ শতাংশ। দালান বা আবাসিক সম্পদ আগে ছিল ৭ দশমিক ৪৩৭ শতাংশ। এবার তা দেখানো হয়েছে ৪১ দশমিক ১৫ শতাংশ।
পাঁচ বছর আগে জাহাঙ্গীরের নগদ ছিল ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এবার দেখিয়েছে ৪০ লাখ টাকা। তিনি ব্যাংকে জমা দেখিয়েছেনে ৫০ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে তা ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৭১ টাকা।
২০১৮ সালে জাহাঙ্গীর ব্যবসায় বিনিয়োগ দেখিয়েছিলেন ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৮৭ টাকা, অর্থাৎ এবারের বিনিয়োগের তুলনায় লাখ দশেক বেশি ছিল তার। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ২০১৮ সালের মতো এবারও দেখানো হয়েছে ১০ লাখ টাকা। তার দুটি গাড়ি, ৩৫ ভরি সোনা, একটি বন্দুক ও একটি পিস্তল, ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং আসবাবপত্র পাঁচ বছর আগের মতো একই পরিমাণে রয়ে গেছে।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী পাঁচ বছর আগে কৃষিখাত থেকে জাহাঙ্গীরের বার্ষিক আয় ছিল দেড় লাখ টাকা। সেটি এখন বেড়ে হয়েছে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। বাড়ি ও দোকান ভাড়া আগেও ছিল চার লাখ ৩০ হাজার টাকা, এবারও তাই। পাঁচ বছর আগে ব্যবসা থেকে তিনি আয় দেখিয়েছিলেন ৯৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। এবার দেখিয়েছেন মাত্র তিন লাখ। সব মিলিয়ে এবার জাহাঙ্গীর বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পাঁচ বছর আগে ছিল দুই কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।
অপরদিকে আজমত উল্লা খান আইন পেশা থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৬ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকে আমানতের মুনাফা থেকে আসে আরও ৬২ হাজার ৫০৫ টাকা। কৃষি ও তৈরি পোশাকসহ তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে সম্মানি ভাতা আসে ২৪ লাখ ৩ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে বছরে আয় হয় ৩১ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৫ টাকা।
আজমতের নিজের কোনো গাড়ি নেই। তার স্ত্রীর একটি প্রাডো গাড়ি রয়েছে। স্বামী ও স্ত্রীর কাছে মোট সোনা আছে ৫০ তোলা। এর মধ্যে নিজের ২০ তোলা এবং স্ত্রীর ৩০ তোলা। নগদ টাকা দেখিয়েছেন চার লাখ ৩১ হাজার ৭৩৬ টাকা। স্ত্রীর হাতে নগদ দেখিয়েছেন দুই লাখ ৩৪ হাজার ৫০৬ টাকা। তার কোনো কৃষি জমি নেই। অকৃষি জমি আছে ১৪০ দশমিক ৬৩৭৯ শতাংশ।
জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী সাবেক সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিনের বার্ষিক আয় চার লাখ টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯৩৪ টাকা ও ব্যাংকে দুই লাখ টাকা। স্থায়ী আমানত রয়েছে ৫৫ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ব্যাংকে রয়েছে ৭৫ লাখ টাকা। নিজের ৫০ ভরি স্বর্ণ ও স্ত্রীর রয়েছে ১০০ ভরি স্বর্ণ। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৩ দশমিক ৬৬ একর কৃষিজমি ও সাত বিঘা অকৃষি জমি। তার দায়ের মধ্যে সাবরিনা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে এনআরবিসি ব্যাংকে ৬৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা এবং ঋণ রয়েছে দুই কোটি ৯০ লাখ টাকা।
মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন সশিক্ষিত। পেশা নেই। ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় তিন লাখ ৪৫ হাজার টাকা। তার নগদ টাকা রয়েছে ব্যবসা হতে উত্তোনসহ ৩৫ লাখ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জামাকৃত অর্থের পরিমান ৫০ হাজার। একটি টেক্সটাইল কম্পোজিট লিমিটেড থেকে আয় ২ লাখ ৫০ হাজার। তার নামে ৩০ তোলার স্বর্ণালংকার রয়েছে।
মেয়র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম এমবিএ পাশ। তার বিরুদ্ধে ২ টি মামলা রয়েছে। দুইটিই নিস্পত্তি হয়েছে। বাড়ি ভাড়া থেকে তার বাৎসরিক আয় ৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। তার নগদ টাকা আছে ২৫ লাখ আর ব্যাংকে আছে ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৩০৮ টাকা। স্বর্ন আছে ৫৩ ভরি। তার স্ত্রীর নামে ব্যাকে টাকা টাকা ৬ লাখ।
মেয়র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল বিএ পাশ। তিনি ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর। তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৯টি। সবগুলোতে খালাস পেয়েছে। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী, ব্যবসা হতে আয় ১১ লাখ ৫০ হাজার। কাউন্সিলর হিসাবে সম্মানি ভাতা পান ৪ লাখ ২০ হাজার। তার নগদ টাকা আছে ১ লাখ ৫০ হাজার। ব্যাংকে আছে ৩০ লাখ। তার একটি জীপ গাড়ি রয়েছে। স্ত্রীর নামে স্বর্ণ রয়েছে ৪০ ভরি।
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান তাকমিল পাশ। তার কোনো সুনির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। তার শিক্ষকতা ও চিকিৎসা আইন পরামর্শ খাত থেকে বাৎসরিক আয় ৩ লাখ। তার কাছে নগদ টাকা আছে ৩ লাখ ৮২ হাজার। ব্যাংকে জমা আছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ১৭৪ টাকা। তার ও স্ত্রীর নামে ২৭ ভরি স্বর্ণ রয়েছে।