সারা বাংলা

ট্রলারে ১০ মরদেহ : জবানবন্দিতে আরও এক আসামির চাঞ্চল্যকর তথ্য

কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে ট্রলার থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আরও এক আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ নিয়ে মামলাটিতে এ পর্যন্ত ৪ আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। 

বৃহস্পতিবার (৪ মে) গিয়াস উদ্দিন মুনির নামের আসামি তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, সাগরে নিহত ১০ জেলেই ডাকাত (জলদস্যু) ছিলেন। তারা পরিকল্পিত ভাবেই সাগরে জেলের বেশে নেমেছিলেন ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে। যার মধ্যে চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলামকে মুনীর নামের এ আসামি সামশু মাঝির ট্রলারে পাঠিয়েছিলেন।

চতুর্থ দফায় আসামি গিয়াস উদ্দিন মুনির আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এবং কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস। 

তিনি জানান- আসামি মুনির জবানবন্দিতে কি বলেছেন আমি জানিনা। তবে রিমান্ডের সময় আসামি মুনিরের প্রদত্ত তথ্যে মামলাটির গতি মোটামুটি একটি জায়গায় এসে থেমেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত হতে আরো সময়ের দরকার রয়েছে।

কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মো. আসিফ বিকাল ৪ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ ঘন্টা ব্যাপি আসামি গিয়াস উদ্দিন মুনিরের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। 

এ মামলায় গত ২৫ এপ্রিল চকরিয়া উপজেলার বদরখালী এলাকা থেকে গিয়াস উদ্দিন মুনিরকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। মুনির বদরখালী এলাকার মো. নুর নবীর ছেলে। এর আগে আসামি বাঁশখালীর বাসিন্দা ফজল কাদের মাঝি ও আবু তৈয়ুব মাঝি এবং মাতারবাড়ির কামাল হোসেন প্রকাশ বাইট্টা কামাল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন।

পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আসামি মুনির প্রদত্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি নিজেও জলদস্যুতায় জড়িত ছিলেন। তবে বেশ কিছুকাল ধরে দস্যুতায় নেই। তিনি বর্তমানে চকরিয়া উপকুলের লবণ মাঠে কাজ করছেন। একজন লবণ চাষির কাছে ৬ মাসের কাজের চুক্তিতে রয়েছেন। রমজান মাসের প্রথম দিকে সোনাদিয়া দ্বীপের জলদস্যু সর্দার সুমন তাকে মোবাইলে বলেছিলেন, সাগরে ঈদের আগে একটি বড় ট্রিপে যেতে হবে। তাতে অনেক টাকা-কড়ি পাওয়া যাবে।

দস্যু সর্দার সুমনকে তিনি চুক্তিতে লবণ মাঠে কাজ করার কারণে ছুটি না মিলার কথা জানিয়ে চকরিয়ার কোনাখালী এলাকার সাইফুল ইসলামকে (নিহত ১০ জনের একজন) সাগরে নিতে বলেন। যথারীতি গত ৭ এপ্রিল মহেশখালীর নুরুল কবির (নিহত) সাইফুলকে মোবাইলে ডেকে নামবিহীন ট্রলারে তুলে দস্যুতার উদ্দেশ্যে সাগরে নিয়ে যায়। সোনাদিয়া দ্বীপের দস্যু সর্দার সুমন এ মুনিরকে আরো জানিয়েছিলো সাগরে লুন্ঠিত মালামাল বিক্রির জন্য যাবতীয় ব্যবস্থাদিও করে রাখা হয়েছে।

গত ৯ এপ্রিল নামবিহীন ট্রলারের ১০ জেলে হত্যার পরও দস্যু সর্দার সুমন লবণ মাঠে কর্মরত মুনিরকে মোবাইলে সাগরে সংঘটিত ডাকাতি ও পরবর্তী সময়ের বিষয়াদি নিয়ে কাউকে না জানানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন। সাগরে নিহত সামশু মাঝির মালিকানাধীন ট্রলারটি নিয়ে দস্যুতার যাবতীয় আয়োজনের নেপথ্যেও কাজ করেছে সোনাদিয়া দ্বীপের দস্যু সর্দার সুমন।

এদিকে তদন্তকারি কর্মকর্তা পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস জানিয়েছেন, মামলার অন্যতম আসামি সোনাদিয়া দ্বীপের বাসিন্দা সুমনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ এপ্রিল গুরা মিয়া নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধিন একটি ট্রলার সাগরে ভাসমান থাকা নামবিহীন ট্রলারটি নাজিরারটেক উপকূলে আসে। আর ওই ট্রলারের হিমঘরে হাত-পা বাঁধা ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ইতিমধ্যে উদ্ধার হওয়া ৬ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করলেও মর্গে রয়ে গেছে ৪ জনের মরদেহ ও একটি কংকাল। ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে এই ৫ জনের পরিচয়।