গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (গাসিক) নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হচ্ছে আজ। নির্বাচনে ৮ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আজমত উল্লাহ খান এবং জাহাঙ্গীর আলমের নাম শোনা গেলেও দল মনোনয়ন দেয় আজমত উল্লাহকে। এরপর জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়ন বাতিল হলে আলোচনায় উঠে আসে তার মা জায়েদা খাতুনের নাম। ছেলে নির্বাচনের মাঠ থেকে ছিটকে গেলেও মাঠে রয়েছেন তিনি।
জায়েদা খাতুন (৬২) রাজনীতির লোক নন। ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জায়েদা খাতুনের স্বামী মিজানুর রহমানের গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জের বান্দাখোলা এলাকায়। বিয়ের পর বড় মেয়ে জারমিন আক্তারকে নিয়ে তিনি চলে আসেন বাবার বাড়ি কালীগঞ্জে। সেখানে জমি কিনে বাড়ি করেন। সেই বাড়িতেই জাহাঙ্গীর আলমের জন্ম। স্বামী এবং সন্তানদের নিয়ে জীবন সংগ্রাম করে চলতে হয়েছে জায়েদাকে। জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েই আজকের অবস্থানে পৌঁছেছেন তিনি। তবে এখন আর কানাইয়ার সেই বাড়িতে থাকেন না। গাজীপুর নগরীর ছয়দানা এলাকায় জাহাঙ্গীর আলমের বাসায় থাকেন।
জায়েদা খাতুনের ছোট ছেলে আল-আমিন সিঙ্গাপুরপ্রবাসী। বড় ছেলে জাহাঙ্গীর আলম মেয়র হওয়ার আগে গাজীপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। জাহাঙ্গীর আলমসহ তার অন্য সন্তানদের বর্তমান অবস্থানে নিয়ে আসতে জায়দা খাতুনকে অনেক ত্যাগ, ধৈর্য, বুদ্ধিমত্তা এবং পরিশ্রম করতে হয়েছে। তিনি শুধু নিজের পরিবার নিয়ে ভাবেননি, এলাকাবাসীর নানা সমস্যা ও সংকটের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জায়েদা খাতুন প্রতিনিয়ত এলাকাবাসীর খোঁজখবর রাখেন। শুধু তাই নয়, জাহাঙ্গীর আলমের জনপ্রিয়তার পেছনে মা জায়েদা খাতুনের ভূমিকা রয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন।
জায়েদা খাতুনের প্রতিবেশী সখিনা বেগম বলেন, এলাকায় তার (জায়েদা খাতুন) জনপ্রিয়তা রয়েছে। আমরা ছোটকাল থেকেই তাকে দেখছি। তিনি সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত না থাকলেও বা কোনো পদে না থাকলেও ছেলের রাজনীতির ভালো-মন্দ বিষয়ে পরামর্শ দেন।
নগরীর অনেক ভোটার মনে করেন, জায়েদা খাতুনের নির্বাচিত হওয়া আর জাহাঙ্গীর আলমের নির্বাচিত হওয়া একই কথা। তবে ভিন্নমতও রয়েছে। তাদের ভাষ্য, মাঠের রাজনীতি ভিন্ন বিষয়। সেখানে জায়েদা খাতুন কতটা পারদর্শী হবেন তা সময়সাপেক্ষ। তাছাড়া বয়সটাও তার প্রতিপক্ষ।
চান্দনা এলাকার বাসিন্দা আলভি হোসেন বলেন, জাহাঙ্গীর এক বিষয়, তার মা অন্য বিষয়। সিটি কর্পোরেশন চালানো সহজ কোনো কাজ নয়। এ জন্য ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
নগরবাসীর কাছে এটা স্পষ্ট যে, নিজের মনোনয়ন বাতিলের আশঙ্কা থেকেই জাহাঙ্গীর আলম তার মাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে এনে দাঁড় করিয়েছেন। দলীয় সমর্থন হারানো ছেলের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে তিনি কতটা সফল হবেন এখন সেটাই দেখার বিষয়।