সারা বাংলা

‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের তৈরি করতে হবে’

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লেজুড়বৃত্তি পরিহার করে মুক্ত বুদ্ধি ও মুক্ত চিন্তার তীর্থস্থান হয়ে উঠতে হবে। জ্ঞানদানের পাশাপাশি নতুন জ্ঞান সৃষ্টির প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। নতুন নতুন গবেষণা ও তার ফলাফল দেশি এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের তৈরি করতে হবে। তাদের মধ্যে শেখার দক্ষতা তৈরি করে দিতে হবে।’ 

রোববার (৪ জুন) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সকলের মধ্যে ইতিহাসবোধ থাকা জরুরি। না হলে শেকড়কে অস্বীকার করা হয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বহু আগ থেকে স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছেন। কমরেড মনি সিংসহ অনেকে এ বিষয়ে বলেছেন। বঙ্গবন্ধুর পুরো রাজনৈতিক জীবন স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে ব্যয় করেছেন। কেননা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন পাকিস্তান কাঠামোর মধ্যে থেকে বাংলাদেশের অধিকার আদায় হবে না।

শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, সময় এখন তোমাদের। বর্তমান তোমাদের, ভবিষ্যতও তোমাদের। কাজেই তোমরা ঠিক করে নাও নিজকে কিভাবে গড়ে তুলবে। মানবতাবোধ, মমত্ববোধ ও ইতিহাসবোধ জাগ্রত করে দেশপ্রেমের মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে নিজেকে ও দেশকে এগিয়ে নেবে- না পেছনে পড়ে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, আগামী জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে। কাজেই সবাইকে প্রশিক্ষিত হতে হবে। অনেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট নিয়ে দুঃখ করেন। প্রকৃতপক্ষে ২৯টি মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শিক্ষার সঙ্গে জড়িত। কাজেই হতাশ হওয়া যাবে না। 

ডা. দীপু মনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়েছে। মুখস্থ নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা উঠে গেছে। সনদ শিক্ষা দিয়ে এখন চলবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে নতুন আঙ্গিকে চিন্তা করতে হবে। গতিশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে হবে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের থেকে ফান্ড তৈরির সুযোগ আছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করে তাদের দেখানো ও সে মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সরকার সব সহযোগিতা করবে।’

সেমিনারে খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ড. মুনতাসির মামুন মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়-অনেক প্রফেসর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে থিসিস করেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো থিসিস হয়নি। জাতীয় চার নেতার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আর যদি হয়েও থাকে তা সংখ্যায় এতো কম যে উল্লেখ করার মতো নয়। কাজেই বঙ্গবন্ধু গবেষণা, বঙ্গবন্ধু চর্চা, তার আদর্শ ধারণ ও লালন বাড়াতে হবে। এতে দুঃখ করে বলা হয়- অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা সাহিত্য বা ইতিহাসের মতো বিভাগ থাকে না। এসব বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজিতে পড়তে ও পড়াতে বাধ্য করে। এমন অপচর্চা বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ইতিহাস, পদার্থ ও রসায়নের মতো বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক করতে হবে। তবেই তরুণ প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জেনে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ ও লালন করতে পারবে। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরিণ আখতারের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে উপ-উপাচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী, প্রক্টর ড. মো. নুরুল আজিম সিকদার উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনার শেষে মন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ-এর নব নির্মিত একাডেমিক ভবন উদ্বোধন করেন।