মানিকগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় একাধিক বহুতল ভবনের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় নকশা বর্হিভূতভাবে দোকান ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব ভবন মালিকদের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা থেকে দোকান সরিয়ে নেওয়ার নোটিশ দিয়েছে পৌরসভা কার্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগ। তবে বছরের পর বছর পার হলেও সরেনি দোকান।
কয়েক দফা নোটিশ দিলেও এসব দোকান উচ্ছেদে কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। পৌর নাগরিকদের দাবি, পার্কিংয়ের জায়গায় এসব দোকান উচ্ছেদে পৌরসভার নমনীয় স্বভাবের কারণে সড়কে যানজট বাড়ছে।
এদিকে, পার্কিংয়ের জায়গায় গড়ে উঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে পৌরসভা। একদিকে দোকান সরিয়ে নিতে নোটিশ আরেক দিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া পৌরসভার এমন কার্যক্রম নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
তবে, পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স শাখার দাবি, এসব দোকানগুলোতে আগে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হলেও এখন বন্ধ রয়েছে।
পৌরসভা কার্যালয় জানায়, ২০১৯ সালে শহিদ রফিক সড়কের ৪১-৪২ নম্বর হোল্ডিংয়ের মো.নজরুল ইসলাম গং, ৬২ নম্বর হোল্ডিংয়ের মো.হামিদুর রশিদ কাজল, ১১৫ নম্বর হোল্ডিংয়ের মো. তুফান আলী, ১৯৬-১৯৭ হোল্ডিংয়ের শাহরিয়ার নুর,নগর ভবন রোডের ৩১ নম্বর হোল্ডিংয়ের আরফান আলী, বাসস্ট্যান্ড হাইওয়ে রোডে ১৬ নম্বর হোল্ডিংয়ের তাবারাকুল তোছাদ্দেক হোসেন খান টিটু, শহিদ স্মরণী সড়কের ৫, ৬, ৭ নম্বর হোল্ডিংয়ের ফারুক মিয়া গং, মো. নবুর উদ্দিন, সওকত আলী গং, ১৬ নম্বর হোল্ডিংয়ের মো.মজিবর রহমান, ৪১/২ পূর্ব দাশড়া এলাকার আব্দুস সালাম গংদের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা থেকে বাণিজ্যিক দোকান সরিয়ে নিতে নোটিশ করা হয়েছে।
এছাড়া, ২০২২ সালে শহিদ রফিক সড়কের ১৯৩ নম্বর হোল্ডিংয়ের চাঁদনী রয়েল টাওয়ারের আব্দুর রহমান, ১৯৮ নম্বর হোল্ডিংয়ের বিসি শপিং সেন্টারের শাহরিয়ার নুর, ৪১ নম্বর হোল্ডিংয়ের মো. নজরুল ইসলাম গং, ৬২ নম্বর হোল্ডিংয়ের মো. হামিদুর রশিদ কাজল, ৬৪-৬৫ হোল্ডিংয়ের তুফান আলী প্লাজার তুফান আলী, শহিদ স্মরণী সড়কের ৫, ৬, ৭ নম্বর হোল্ডিংয়ের ফারুক মিয়া, ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ, নবুর উদ্দিন, শওকত আলী গংদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ইমারত বিধিমালা অনুযায়ী নোটিশ না মানলে ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার সুযোগ রয়েছে। তবে কাউকে জরিমানা করা হয়নি।
সরেজমিনে শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে শহিদ রফিক সড়কে ঘুরে দেখা গেছে, বাসস্ট্যান্ডে সিটি সেন্টারের পার্কিংয়ের জায়গায় ৪২টির মতো দোকান রয়েছে। এসব দোকান থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে ভাড়া দিয়েছেন ভবনের মালিক জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটু। এছাড়া প্রতি মাসে তুলছেন দোকান ভাড়া। গাড়ি পার্কিংয়ের দোকানগুলো সরিয়ে নিতে ২০১৯ সালে তাকে নোটিশ করে পৌরসভা। চার বছর পার হয়ে গেলেও সরেনি দোকান, পৌরসভাও নেয়নি উচ্ছেদ কার্যক্রম।
এ বিষয়ে ওই ভবনের মালিক তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটু বলেন, মার্কেটে পার্কিংয়ের জায়গা রয়েছে।
বাসস্ট্যান্ডে দোয়েল ক্লিনিকের নিচে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় গড়ে উঠেছে ২২টির মতো দোকান। এসব দোকানগুলো থেকে মালিকপক্ষ ফারুক মিয়া, ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ, নবুর উদ্দিন, শওকত আলী গংরা ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে তুলছেন অর্ধ লাখ টাকা। ২০১৯ ও ২০২২ সালে এসব দোকান সরিয়ে নেওয়ার নোটিশ দেয় পৌরসভা। মালিকপক্ষ শুধুমাত্র সামনের দুটি দোকান ভেঙ্গে পার্কিংয়ের জায়গা করে দিলেও বাকি ২০টি দোকান এখনো চলছে।
ভবন মালিক ফারুক মিয়া বলেন, পৌরসভা নোটিশের পর দুটি দোকান ভেঙ্গে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শহিদ রফিক সড়কের তুফান আলী প্লাজার কার পার্কিংয়ের জায়গায় মাই ক্রাফট নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ ভবনের মালিক তুফান আলীকে ২০১৯ ও ২০২২ সালে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিতে নোটিশ করে পৌরসভা। দুই দফা নোটিশের পরেও সরেনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পৌরসভাও নেয়নি আর কোনো কার্যত ব্যবস্থা।
এ বিষয়ে আলী প্লাজার ভবন মালিক তুফান আলী বলেন, পুরোপুরি ভবন নির্মাণ শেষ হয়নি। তাই পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান ভাড়া দিয়েছি। পৌরসভার নোটিশ পেয়েছি। কর্তৃপক্ষ বললে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিবো।
শহিদ রফিক সড়কের আরেক ভবন কাজল কমপ্লেক্সের কার পার্কিংয়ের জায়গায় গড়ে উঠেছে চাঁদের হাট নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ২০১৭ সাল থেকে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯ ও ২০২২ সালে সরিয়ে নিতে দেওয়া হয়েছে নোটিশ। ওই ভবনে গিয়ে ভবন মালিক হামিদুর রশিদ কাজলকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
চাঁদের হাটের ব্যবস্থাপক ফয়সাল ইসলাম বলেন, নোটিশের বিরুদ্ধে আদালতে রিট করে তারা ব্যবসা করছেন। তবে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই ভবন মালিকের সঙ্গে প্রতিবেশীদের মামলা রয়েছে। পৌরসভার নোটিশের বিরুদ্ধে কোনো রিট নেই। আর রিট করলেও তারা জিততে পারবে না। কারণ তারা ইমারত বিধিমালা লঙ্ঘন করে আইন অমান্য করেছেন।
পৌর নাগরিকরা বলেন, দিন দিন পৌরসভার প্রধান সড়কেগুলোতে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। সড়কের সঙ্গে হওয়া সত্ত্বেও একাধিক ভবনের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা নেই। তারমধ্যে আবার যে সব ভবনে গাড়ির পার্কিংয়ের জায়গা আছে সেখানে তারা শপিং সেন্টার বা দোকান গড়ে তুলেছেন। ওই সব শপিং সেন্টারের সামনে আগত ক্রেতারা গাড়িং পার্কিং করে। ফলে শহরের প্রধান সড়ক সরু হওয়ায় যানজট লেগেই থাকে। এসব দোকানপাট বন্ধে পৌরসভা কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে ভবন মালিকরা আরো সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
নোটিশ করা হলেও উচ্ছেদ কেন করা হয় না এমন প্রশ্নের জবাবে পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেন বলেন, দ্রত উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সার্বিক বিষয়ে পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা বজলুর রহমান বলেন, নোটিশ না মানলে পৌর সভার উচ্ছেদ করার ক্ষমতা আছে। নিয়ম অনুযায়ী উচ্ছেদের জন্য প্রকৌশল বিভাগের চাহিদার প্রেক্ষিতে প্রথমে জেলা প্রশাসন থেকে একজন ম্যাজিস্ট্রট চাওয়া হয়। পরে জেলা প্রশাসন ওই ভবন মালিককে নোটিশ করবেন। পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে উচ্ছেদ করা হয়। তবে বিষয়টি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার হওয়ায় উচ্ছেদের বিষয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।