জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে মেহমুদ হারুন (২২) নামের এক পুলিশ কনস্টেবলকে গণপিটুনি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে অভিযুক্তকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে অবৈধ ওয়াকিটকি এবং হ্যান্ডকাফ জব্দ করা হয়।
রোববার (১১ জুন) রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন সড়কে ঘটনাটি ঘটে৷
আটক হওয়া মেহমুদ হারুন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইন্সের এসএএফ-এর কনস্টেবল পদে কর্মরত। তার বাড়ি সাভারে রাজাশনে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন সড়কে এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করেন পুলিশ কনস্টেবল হারুন ও তার সঙ্গে থাকা বিদ্যুৎ চৌধুরী নামে এক যুবক। তখন ভুক্তভোগী নারী তার বন্ধুদের ফোনে বিষয়টি জানান। পরে অভিযুক্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন ফটক দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এসময় বিদ্যুৎ চৌধুরী পলিয়ে গেলেও হারুনকে ধরে ফেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় তাকে গণপিটুনি দেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার কাছে তুলে দেন।
ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের সমানের রাস্তা দিয়ে হলে ফিরছিলাম। এসময় পুলিশ কনস্টেবল ও তার সঙ্গে থাকা আরও একজন এসে আমার পথ রোধ করে এবং আমাকে নানা ধরনের আপত্তিকর কথা বলে। আমি একটি রিকশায় উঠলেও তারা নানাভাবে আমর সঙ্গে অসভ্য আচরণ করে। এরপর আমি আমার বন্ধুদের ফোন করি। পুলিশ কনস্টেবল ও তার সঙ্গে থাকা লোকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন ফটক দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় একজন বাসে উঠে পালিয়ে যায়। তবে আমার বন্ধুরা পুলিশ কনস্টেবলকে ধরে ফেলে।
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য মেহমুদ হারুন অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘আমি একা ছিলাম না। আমার সঙ্গে যে ছোট ভাই ছিল সেও জড়িত। তার নাম বিদ্যুৎ চৌধুরী। সে পালিয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান সুদীপ্ত শাহিন বলেন, শিক্ষার্থীরা অভিযুক্তকে আমাদের হাতে তুলে দেয়। অভিযুক্ত প্রাথমিকভাবে তার দোষ স্বীকার করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করবে।
এদিকে রাত সাড়ে ১২টায় আশুলিয়া থানা পুলিশের চার থেকে পাঁচজন কর্মরত পুলিশ সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখায় আসেন। এসময় পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবজাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধানের সঙ্গে উদ্ধত আচরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে হেয় করে কথা বলেন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে এসআই আবজাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যান।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান বলেন, আমি বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অভিহিত করেছি। আমরা অভিযুক্ত কনস্টেবলের বিরুদ্ধে মামলা নিবো। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় একটি মামলা হবে।
তিনি আরো বলেন, উদ্ধত আচরণ করা এসআই আবজালকে আশুলিয়া থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সহকারী অধ্যাপক এস এম এ মওদুদ আহমেদ বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা অভিযুক্তকে হাতেনাতে ধরছে। অভিযুক্তকে আমরা আশুলিয়া থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছি৷ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করবে।