বগুড়ার শেরপুরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি ভবন প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে নিলাম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের সরকারি ভবনটি মাত্র ৮৬ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। ফলে সরকার প্রচুর রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিছুদিন আগে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ভবনটির মেয়াদ উর্ত্তীণ হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। সেইসঙ্গে এটি অপসারণ করার জন্য জন্য নিলাম দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর এই নিলাম কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা প্রকৌশলী লিয়াকত হোসেন ও তার দপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যথাযথ প্রচার-প্রচারণা না চালিয়ে সরকারি ওই ভবনটি নিলাম দেন তিনি বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকি এক্ষেত্রে সরকারি কোনো নিয়মই মানা হয়নি বলেও চানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, বহুল প্রচার ও প্রসারের জন্য নিলাম বিজ্ঞপ্তিটি পত্রিকায় দেওয়া হয়নি। উপজেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টাঙানো হয়নি কোনো নোটিশ। এছাড়া মাইকযোগেও কোনো প্রচার চালানো হয়নি। প্রকৌশলীর নিজের পছন্দের লোকজন ছাড়া নিলামের বিষয়টি তেমন কেউই জানতেন না। তাই নিলাম ডাকে সর্বনিম্ন মূল্য ধরেন মাত্র ৭৫ হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়া কাগজ-কলমে ২০০ টাকা মূল্যের দরপত্র ৬৪টি বিক্রি দেখানো হলেও কাঙ্খিত সংখ্যক দরপত্র জমা পড়েনি।
মাত্র চারটি দরপত্র জমা দেখিয়ে গত ৭ জুন দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বসে অনেকটা গোপনেই নামমাত্র মূল্যে ৮৬ হাজার ৫০০ টাকায় বগুড়ার মের্সাস বুলবুল ট্রেডার্সের নিকট সরকারি ভবনটি বিক্রি করা হয়। পরবর্তীতে সেটি আবার চারগুণ বেশি দামে বিক্রি করে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
পুরনো স্থাপনা ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী সোলায়মান আলী বলেন, ‘সরকারি ভবন নিলামের বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি। তাই দরপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ পাইনি। এছাড়া নিলামের বিষয়টি পত্রিকায় বা মাইকে প্রচার করতে হয়। কিন্তু তেমন কিছুও দেখিনি। যদি আগে জানতাম তাহলে অবশ্যই দরপত্র কিনে জমা দিতাম এবং ডাকে অংশগ্রহণ করতাম। আর আমরা অংশ নিলে অবশ্যই সরকারি ওই ভবনটি বেশি দামে বিক্রি করা সম্ভব হতো। সরকার অনেক বেশি রাজস্ব পেতো।’
উপজেলা প্রকৌশলী লিয়াকত হোসেন বলেন, নিলাম বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় দেওয়ার নিয়ম নেই। তাই এটি করা হয়নি। মাইকযোগে প্রচার-প্রচারণা না হলেও নোটিশ জারির মাধ্যমে সবাইকে জানানো হয়েছে। দরপত্রের যথাযথ নিয়ম মানা হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমি একাইতো আর নিলাম দেয়নি। ইউএনও স্যার ও জনস্বাস্থ্যের সহকারী প্রকৌশলীও ছিলেন। কমিটির সবার মতামতের ভিত্তিতেই সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে ভবনটি বিক্রি করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী রিপা পারভিন। তবে তিনি বলেন, নিলামের বিষয়টি কীভাবে করা হয়েছে, সেটি উপজেলা প্রকৌশলী বলতে পারবেন। আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না।
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা বলেন, সরকারি ওই ভবনটি নিলামের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা প্রকৌশলী। তাই প্রচার-প্রচারণা চালানো তারই দায়িত্ব। সেটি যথাযথ ভাবেই করা হয়েছে বলেই জানি। এক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে অবশ্যই আমার নিকট অভিযোগ আসতো। কিন্তু কেউ কোনো অভিযোগ করেনি এরপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।