বর্ষাকালে বন্যার পানি আর শুষ্ক মৌসুমে ফাকা ময়দানে পরিণত হয় ‘সিংশ্রী চক।’ এই জমিতে চাষ হতো একটি মাত্র ফসল। এখন সেখানেই বেসরকারিভাবে গড়ে উঠেছে গরুর খামার। ইতোমধ্যে খামারটি দেখতে শুরু করেছে লাভের মুখ। এই খামার থেকে কেজিপ্রতি ৫০০ টাকা দরে কোরবানির পশু বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খামার কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া, এই খামারে থাকা গাভি থেকে দিনে গড়ে ৭০০ লিটার দুধ পাওয়া যায়। দুধ থেকে কয়েক রকমের মিষ্টি ও দই তৈরি করে নিজস্ব শো-রুমে বিক্রি করা হয় বলেও জানায় কর্তৃপক্ষ।
ঢাকার ধামরাইয়ের কুশুরা ইউনিয়নের সিংশ্রী গ্রামে ‘সুপ্রিম এগ্রো’ নামের খামারটির অবস্থান।
সম্প্রতি খামারটিতে গিয়ে দেখা যায়, বড় দুইটি শেডের ভেতর চারটি সারিতে ও একটি ছোট শেডে একটি সারিতে গরু রাখা হয়েছে। গরম থেকে গরুগুলোকে স্বস্তি দিতে প্রতিটি গরুর মাথার ওপর বৈদ্যুতিক পাখা স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প হিসেবে জেনারেটরের ব্যবস্থাও রয়েছে। খামারের পশ্চিম পাশে স্থাপন করা দুটি কাটার যন্ত্র দিয়ে পশুদের জন্য ঘাস কাটতে দেখা যায় দুই শ্রমিককে।
গাভির খাটি দুধে তৈরি রসগোল্লা
২০২০ সালে মাত্র ২০টি গরু নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘সুপ্রিম এগ্রো’ নামের যৌথ মালিকানাধীন খামারটি। বর্তমানে এই খামারে ফ্রিজিয়ান ও শাহীওয়াল জাতের মিলিয়ে গরুর সংখ্যা ৩১২টি। আছে ২৮টি মহিষও। গরুর দেখভালে কাজ করছেন ২১ জন শ্রমিক। এই খামারে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের গরু রয়েছে। খামারে গরু ওজন করে বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি কেজি ৫০০ টাকা দরে গরু বিক্রি করা হবে এই খামার থেকে গরু। জসিম উদ্দিন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি খামারটির তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন।
জসিম উদ্দিনের কাছেই জানা গেলো খামারটির গল্প। এক রকম শখের বসে ঢাকার কয়েকজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনের কাছে গরুর খামার করার পরিকল্পনার কথা জানান। তখন তিনি সিংশ্রীর এই এক ফসলি জমিতে খামার করার পরামর্শ দেন। সেই ভাবনা থেকেই ৭০ বিঘা জমি কেনা হয়। এরমধ্যে ৩০ বিঘা জমিতে গরুর শেড করা হয়। গরুর দুধ থেকে মিষ্টি ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী তৈরি করতে একটি খাদ্য উৎপাদন কারখানাও করা হয়েছে। আর ৪০ বিঘা জমিতে ঘাস উৎপাদন করা হচ্ছে।
খামারে সোয়া ১ লাখ টাকা থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে
জসিম উদ্দিনের সঙ্গে আলাপের ফাঁকে দুই ব্যক্তি খামারটি দেখতে এলেন। তাদের একজন উপজেলার কুশুরা ইউনিয়নের কুশুরা গ্রামের নূর হোসেন। তিনি বলেন, ‘এমন একটি মনোরম পরিবেশে খামারের কথা শুনে দেখতে এলাম। গরুগুলোকে প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়াতে দেখলাম। এসব গরুর মাংস খেতেও মজা হয়।’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আগে এই জমিতে শুধু একবার ধান চাষ হতো। সেখানেই আমরা খামার করেছি। কৃত্রিম পদ্ধতিতে গরু দ্রুত সময়ের মধ্যে মোটাতাজা করা যায়। তবে আমরা ভুট্টা, চালের গুঁড়া, তাজা ঘাস, খড়, খইল ও খেসারিগুঁড়াসহ প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে খামারের গরুগুলোকে পালন করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গরুর দুধ থেকে আমরা নিজেরাই মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরি ও বিক্রিও করে থাকি। এখানে আমাদের শতাধিক গাভি রয়েছে। এসব গাভি থেকে দিনে গড়ে ৭০০ লিটার দুধ পাওয়া যায়। দুধ থেকে কয়েক রকমের মিষ্টি ও দই তৈরি করা হয়। তৈরি করা খাবার বিক্রির জন্য আমাদের শো-রুমও রয়েছে।’
গরু খামার থেকেই বিক্রি করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন গরুর সংখ্যা বাড়াচ্ছি। আমাদের পরিকল্পনা ১,০০০ গরু পালন করার। তবে প্রতিবছর কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কিছু গরু প্রস্তুত করা হয়। এবছর ৭৮টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কোনো গরু হাটে নিয়ে বিক্রি করি না। আমাদের গরু খামার থেকেই প্রতিকেজি ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। বিক্রির পর গরু ক্রেতার বাড়ি পৌঁছে দেই আমরা নিজেরাই।’
সুপ্রিম এগ্রোর তদারকির দায়িত্বে থাকা এই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে একটি গরু সাড়ে তিন লাখ টাকা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জমি ও গরু সবমিলিয়ে এখানে প্রায় ৬ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। প্রতিবছরই গরু থেকে লাভবান হয়েছি। পুরোপুরি প্রস্তুত হলে এটি একটি আদর্শিক খামার হবে বলে আশা করছি।’