সারা বাংলা

প্রস্তুত সাভারের চামড়া শিল্প নগরী

আসন্ন কোরবানি ঈদে এক কোটি পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছে সাভারের চামড়া শিল্প নগরী। লবণ, রাসায়নিক দ্রব্য ও অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে ১৪২টি ট্যানারি চামড়া সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন বিটিএ। তবে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার সিইটিপি ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

শুক্রবার (২৩ জুন) সাভারের তেঁতুলঝোড়া এলাকার বিসিক চামড়া শিল্প নগরীতে গিয়ে দেখা গেছে, কোরবানির চামড়ার বর্জ্যের অতিরিক্ত চাপ সামলাতে সিইটিপি সংস্কারের কাজ চলছে। এছাড়া বিসিক এলাকার জমে থাকা বিভিন্ন আবর্জনা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। পরিষ্কার করা হচ্ছে পানি নিষ্কাশনের নালা। বিভিন্ন কারখানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি নির্দেশনা মেনে অনেক কারখানার সামনেই লাগানো হয়েছে গাছ।

আসন্ন ঈদ উল আজহার প্রস্তুতির ব্যাপারে প্রিন্স লেদার ইন্ডাস্ট্রিজের প্রোপ্রাইটর মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গত বারের তুলনায় এবার বস্তাপ্রতি লবণের দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।  পাশাপাশি যেসব কেমিক্যাল লাগে সেগুলোরও দাম বেড়েছে। বাড়তি দামেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। আশা করছি আগের বারের মতই চামড়া সংগ্রহ করতে পারব।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্ল্যাহ বলেন, সাভারের ১৪২টি ট্যানারি চামড়া সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত। লবণ থেকে শুরু করে অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য সব প্রস্তুত আছে। দেশের বিভিন্ন জেলার মৌসুমী যে শ্রমিক আছে চামড়া প্রস্তুত করার জন্য তাদেরকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের ট্যানারিগুলো প্রস্তুত। এ বছর গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

কোরবানির ঈদের দিন ও তার পরদিন মূলত সারা দেশ থেকে কাঁচা চামড়া আসে সাভারের এই চামড়া শিল্প নগরীতে। ঈদের তৃতীয় দিনও খুব অল্প পরিমাণে আসে কাঁচা চামড়া।  লবণ দেওয়া চামড়া আসতে শুরু করে এক সপ্তাহ পর থেকে।  ঈদের বাড়তি চাপ ছাড়াও স্বাভাবিক সময়ের জন্যও এখনও পুরোপুরি প্রস্তুতি হতে পারেনি সাভারের বিসিক চামড়া শিল্প নগরী। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোন সুযোগই এখনো এখানে গড়ে ওঠেনি। এছাড়া ডাম্পিং ইয়ার্ডও এখনো গড়ে তোলা হয়নি।

এ বিষয়ে সাখাওয়াত উল্ল্যাহ বলেন, কিছু কাজ অসম্পূর্ণ রেখে ট্যানারিগুলো স্থানান্তর করা হয়েছে। ওই কাজ এখনো সম্পূর্ণ করা হয়নি। আর ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট এখনো ১ শতাংশও হয়নি। ডাম্পিং তো সমাধান না। রিইউজটা হচ্ছে সমাধান। ডাম্পিং নিয়ে কথা বলতে বলতে অনেকে চুপ হয়ে গেছে। ৭-৮ বছর হয়ে গেছে শুধু ডাম্পিংই হচ্ছে।

শিল্প নগরী সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (সিইটিপি) ক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার কিউবিক মিটার পানি শোধন করার। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে চাপ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৫ হাজার কিউবিক মিটারে বলে দাবি ট্যানারি মালিকদের। 

বিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে আসার চেষ্টা করছেন কারখানা মালিকরা। তাই তরল বর্জ্যের পরিমাণ কমে আসছে।

এ বিষয়ে সাভারের বিসিক চামড়া শিল্প নগরীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান রিজওয়ান বলেন, ট্যানারির মালিকদের পানি ব্যবহারসহ বিভিন্ন কমপ্লায়েন্স নিয়ে সচেতনতা দেখা যাচ্ছে। হাইকোর্টের ৪টি নির্দেশনা তারা মেইন্টেইন করার চেষ্টা করছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের মনিটরিং করছে। যাদের পরিবেশের সার্টিফিকেট নেই তাদের ইউটিলিটি লাইন কেটে দেওয়া হচ্ছে, তাদের প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি অনুধাবন করেই দেখা যাচ্ছে যে উনারা এখন কমপ্লায়েন্সে আসার চেষ্টা করছেন। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের সিইটিপির উপর প্রেশারটা অনেক কমই আসে এখন। আগে যেমন পানি আসত, সেই তুলনায় এখন অনেক পানি কম আসছে। একদম রাতারাতি সব চেঞ্জ হয়ে যাবে তা তো আমরা আশা করতে পারি না তবে এবারে আমরা আশা করছি ট্যানারি মালিকরা এখন নিজেরা আগের চেয়ে অনেক সচেতন। এছাড়া ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন বিটিএ কমিটিতে ৬ জন মালিক ডিরেক্টর আছেন তাই আশা করছি আমাদের হ্যান্ডেলিংটা অনেক ভালো হবে।

ঈদের অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে সিইটিপির যন্ত্রাংশগুলো মেরামত বা পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমরা নিজেরা ওভাররোলিং করে, মেশিনারিজ পরিবর্তন করে নিজেদের মত একটা ভালো প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি ঈদের আগে আমাদের এইকাজগুলো শেষ হয়ে যাবে। ঈদকে কেন্দ্র করে গতবারের তুলনায় আমাদের আরও বেশি মনিটরিং থাকবে, মালিকদের সহযোগীতার মনোভাবও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক সৈয়দ নজমুল আহসান বলেন,  ইতোমধ্যে আমরা ৩ জনের টিম করে দিয়েছি। তারা প্রতিদিন মনিটরিং করছে। ঈদের পরেও আমাদের মনিটরিং বজায় থাকবে।