খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলায় সাদিয়া নাসরিনসহ চার নারী ফুটবলারের উপর প্রতিপক্ষের হামলার পর এবার তাদের এসিড দিয়ে ঝলসে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) সকালে উপজেলার তেঁতুলতলা আঞ্জুর মোড় নামক স্থানে আসামি সালাউদ্দিন এ হুমকি দেয় বলে অভিযোগ করেছেন হামলার শিকার সাদিয়া নাসরিন। এমনকি, এসিড মারতে ব্যর্থ হলে নিজে আহত হয়ে উল্টো নারী ফুটবলারদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন আসামিরা।
শারীরিক হামলা এবং এসিড নিক্ষেপের হুমকির ঘটনায় নারী ফুটবলারদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপর হয়েছে।
স্থানীয়দের কটূক্তির প্রতিবাদ করায় গত ২৯ জুলাই হামলার শিকার হন নারী ফুটবলার সাদিয়া নাসরিনসহ চার জন। এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ নূর আলম নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে সালাউদ্দিনসহ অন্য আসামিরা এখনও গ্রেপ্তার হয়নি।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামের মেয়ে সাদিয়া নাসরিন। সে খুলনার অনূর্ধ্ব-১৭ দলের ফুটবলার। স্থানীয় ‘সুপার কুইন ফুটবল একাডেমি’ নামের একাডেমিতে প্র্যাকটিস করে। আর এ কারণে তাকে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। শনিবার (২৯ জুলাই) স্থানীয়দের কটূক্তির প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হয়।
সাদিয়া নাসরিন অভিযোগ করে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) একাডেমিতে প্র্যাকটিস করার সময়ে নুপুর খাতুন নামের এক মেয়ে আমার ছবি তোলেন। পরে আমার বাবা-মাকে দেখিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করেন। শনিবার (২৯ জুলাই) বিকেলে তার কাছে আমি বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞেস করলে, তিনি অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। আমি এর প্রতিবাদ করলে তিনি এলোপাতাড়িভাবে আমাকে কিল, চড়, ঘুষি মারেন।’
সাদিয়া নাসরিন আরও বলে, ‘আমি বিষয়টি বাবা-মা এবং আমার ক্লাবের কোচ মুস্তাকুজ্জামান মুস্তাকসহসহ অন্য খেলোয়াড়দের জানাই। তারা আমাকে সঙ্গে নিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে নুপুরের বাড়িতে যান। তাতেই তার পরিবারের লোকজন আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হন। পরে আলাউদ্দিন, সালাউদ্দিন, নুর আলম, রঞ্জি বেগম ও মনোয়ারা বেগম আমাদের উপর হামলা চালান। এতে আমার বান্ধবী মঙ্গলী বাগচী, হাজেরা খাতুন ও জুই মণ্ডল আহত হয়।’
আহত মঙ্গলী বাগচীর মা সুচিত্রা বাগচী বলেন, ‘শুধু ফুটবল খেলা নিয়ে আমাদের মেয়েদের নানা কটূক্তির শিকার হতে হয়। তাই মেয়েদের বুঝিয়েছি ফুটবল না খেলতে বলেছিলাম। এবার তাদের নির্যাতন করা হলো। মেয়েদের বলেছি, ফুটবল ছেড়ে দাও, কিন্তু তারা তো নাছোড়বান্দা, ফুটবল খেলবেই।’
আহত ফুটবলার সাদিয়া নাসরিন মঙ্গলবার (১ আগস্ট) এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি রোববার (৩০ জুলাই) হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছি। কিন্তু তার বান্ধবী মঙ্গলী বাগচি এখনও অসুস্থ অবস্থায় বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তি রয়েছে।’
সাদিয়া নাসরিন অভিযোগ করেন, ‘মঙ্গলবার (১ আগস্ট) সকালে মামলার বিষয়ে থানায় যাওয়ার পথে স্থানীয় তেঁতুলতলা আনজুর মোড়ে পৌঁছালে আসামি সালাউদ্দিন সকল নারী ফুটবলারের উপর এসিড হামলার হুমকি দেন। এতে ব্যর্থ হলে নিজেই নিজের শরীর ক্ষতবিক্ষত করে নারী ফুটবলারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবেন বলেও হুমকি দেন। এ বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। অভিযোগের পর পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপর হয়েছে।’
এ বিষয়ে খুলনার বটিয়াঘাটা থানার ওসি শওকত কবীর বলেন, ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং নুর আলম নামে এক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।