সারা বাংলা

কোরআনের শিক্ষকতার সঙ্গে সমাজ সংস্কারেও ভূমিকা রেখেছেন হাফেজ নূরুজ্জামান

‘১৯৭৩ সাল থেকে ২০২৩— দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে কোরআন-শিক্ষকতা করেছেন হাফেজ মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। সুদীর্ঘকাল গৌরবময় শিক্ষকতার পাশাপাশি একাধারে তিনি সমাজ চিন্তা ও পরিবর্তনেও নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। কয়েক সহস্রাধিক শিক্ষার্থীকে কোরআনের শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি ধর্মীয় সংস্কারমূলক কাজেও নিজেকে নিয়োজিত রাখতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।’

শনিবার (১২ আগস্ট) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর খেলার মাঠে আয়োজিত এক স্মরণ অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট আলেম ও তার শিক্ষার্থীরা এসব কথা বলেন। হাফেজ নুরুজ্জামানের গৌরবময় শিক্ষকতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দিনব্যাপী এই আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রয়াত হাফেজ নূরুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু-সহকর্মী, দারুল উলুম ইসলামিয়া হরষপুর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সিরাজুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠানে ‘গৌরবময় শিক্ষকতার ৫০ বছর: রঈসুল হুফফাজ হাফেজ মোহাম্মদ নূরুজ্জামান রহ. স্মারকগ্রন্থ জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। 

উল্লেখ্য, গত ২৭ মে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার নিজ গ্রামের বাড়ি গোবিন্দপুরে আনুমানিক ৭৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে তিনি বেশ কিছুদিন অসুস্থ হয়ে বিছানায় শায়িত ছিলেন। 

সভায় বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব ও জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, হাফেজ নূরুজ্জামান কোরআনের দীর্ঘদিনের খাদেম ছিলেন। মরহুম হাফেজ নূরুজ্জামান সাহেবের পরিবারের সাথে আমার বহু বছর আগে সম্পর্কের সূত্রপাত হয়েছিল। তার শিক্ষাদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের বহু এলাকায় কোরআনের আলোয় আলোকিত হয়েছে। যিনি হাজারো হাফেজ তৈরির উপলক্ষ ছিলেন। তিনি যখন হেফজ পড়ানো শুরু করেন, তখন আজকের মতো সুবিধাজনক পরিস্থিতি ছিল না।

আলোচনা সভায় প্রয়াত হাফেজ নূরুজ্জামানের ছাত্র, ভক্ত, অনুরাগীসহ বিপুল সমাগম হয়। বক্তারা তাদের বক্তব্যে তার শিক্ষকতা জীবনের স্মৃতি, সমাজসংস্কার, সমাজচিন্তা, ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার বিষয়গুলো তুলে ধরেন। কোনও কোনও ছাত্র ও ভক্ত স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ হাফেজ নূরুজ্জামানকে কেন্দ্র করে একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তোলার প্রস্তাব করেন। আলোচনা সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন। 

মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব হাফেজ মাওলানা এনায়েতুল্লাহর স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু সভায় আরও বক্তব্য দেন হেফাজত মহাসচিব ও হাইয়াতুল উলিয়ার কো-চেয়ারম্যান মাওলানা সাজিদুর রহমান, বসুন্ধরা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আরশাদ রাহমানী, মাওলানা নুরুল ইসলাম খান, হেফাজতনেতা মুফতি মুবারকুল্লাহ, শায়খুল হাদীস পরিষদের সভাপতি মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজিজ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা আবদুর রহিম কাসেমী, শায়খুল হাদীস পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা মহসিনুল হাসান, মাওলানা এহসানুল হক, মাওলানা আল আবিদ শাকির, পীর ইয়ামেনি মার্কেট মসজিদের খতিব মাওলানা ইমরানুল বারী সিরাজী প্রমুখ। 

এ ছাড়া, মাওলানা নুরুল ইসলাম, মাওলানা দ্বীন মোহাম্মদ আশরাফ, মাওলানা আলী আজম, মাওলানা এনামুল হক খান, হাফেজ আবুল বাশার, হাফেজ জিয়াউল আমীন, মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা আবদুর রহমান, হাফেজ জাবের আল হুদা, হাফেজ মাহফুজুর রহমান, হাফেজ নুরুল আমিন আজাদী প্রমুখ বক্তব্য দেন।