সারা বাংলা

শোক দিবসে নেতাকর্মীরা ব্যস্ত আত্মপ্রচারে

১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস। দিবসটিতে সারাদেশে নানা কর্মসূচি থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। তবে শোক দিবস ঘিরে তৈরি করা অনেক ব্যানার-পোস্টারই ছেয়ে থাকতে দেখা যায় সংগঠনের নেতাদের মুখশ্রী। শোক পালনের ‘ছদ্মবেশে’ চলে আত্মপ্রচার।

দলীয় নেতাকর্মীদের এ ধরনের আত্মপ্রচারণা ঠেকাতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছবি ব্যবহারের উপর সংযত হতে একটি নির্দেশনা জারি করা হয় ২০১৫ সালে। নির্দেশনায় বলা রয়েছে, ‘পোস্টার-ব্যানার, বিলবোর্ড ও লিফলেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ছাড়া কারও ছবি ব্যবহার করা যাবে না।’ ওই নির্দেশনার পরও গত কয়েক বছরে থামেনি এ ধরনের আত্মপ্রচার।

এবারের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিশাল বিশাল ব্যানার, ফেস্টুন টানানো হয়েছে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। ওইসব ব্যানারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের ছবিও রয়েছে। এর বাইরেও রয়েছে আ ক ম মোজাম্মেল হক, আজমত উল্লা খান, জাহাঙ্গীর আলম, আতাউল্লাহ মণ্ডলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীর ছবি। অন্য শহিদদের ছবি না দিলেও বড় নেতাদের ‘আনুকূল্য’ পেতে ফেস্টুনের বড় অংশজুড়ে রেখেছে তাদের প্রায় ৭/৮ জনের ছবি। শোক দিবসের ব্যানারে যা বড্ড বেমানান।

গাজীপুরের সদর, টঙ্গী, গাছা, কোনাবাড়ী, চৌরাস্তা, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ১৫ আগস্টের শত শত ব্যানার ও ফেস্টুন। কিন্তু এসব ব্যানার, ফেস্টুনগুলোতে ছবি এমনভাবে স্থান পেয়েছে যে; কে শহিদ আর কে জীবিত- অনেক ক্ষেত্রে তা বোঝা কষ্টকর। এ জাতীয় আত্মপ্রচারণার ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’ ঝুলতে দেখা গেছে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান, পাড়া-মহল্লার অলি-গলি, দোকান, দেয়াল, গাছ সর্বস্থানেই। এ ছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ ধরনের ফেস্টুন নেতাকর্মীরা প্রচার করে যাচ্ছেন। এসব প্রচারণায় বঙ্গবন্ধু ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ছবি এক কোণায় ছোট পরিসরে স্থান পেয়েছে। আর প্রচারকারী নেতার জায়গা অধিকাংশজুড়ে। এমনকি, আত্মপ্রচারের এই সুযোগ হাতছাড়া করেননি কর্মীরাও।

মহানগরীর একাধিক নেতা জানান, নেতাকর্মীরা কি শোক দিবসের মাহাত্ম্য অনুধাবন করতে পারেননি; নাকি নিছক প্রচারের জন্য এই আয়োজন, যেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে শোক দিবসকেও। ‘বড় ভাইয়ের হাত ধরে’ হঠাৎ নেতা বনে যাওয়ারাই দলের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শোক দিবসেও চালাচ্ছেন নিজের প্রচারণা। মূলত পদ-পদবী আর নেতার মন খুশি রাখতেই এসব করছেন তারা। 

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল বলেন, আমাদের মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে শুধু বঙ্গবন্ধুর ছবিই থাকবে। যারা শোক দিবসের ব্যানার-ফেস্টুনে অন্য নেতাকর্মীদের ছবি দিয়ে প্রচার করছেন, তারা দিবসটির মাহাত্ম্য অনুধাবন করতে পারেননি। তারা নিজেদের স্বার্থে করছেন, কারও অনুমতিও নেয়নি। এমনকি, আমার ছবি যারা দিচ্ছেন তারাও অনুমতি নেয়নি।