রাজবাড়ীতে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলটি মিছিল বের করলে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের পান্না চত্বর এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। এতে বিএনপির অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। একই সঙ্গে বিএনপির ১৫ নেতাকর্মীকে আটকও করেছে তারা।
পুলিশের দাবি, সংঘর্ষ চলাকালে তাদের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়া রাজবাড়ী রেল স্টেশনে জিআরপি থানায় হামলা চালিয়েছে বিএনপি কর্মীরা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ওই থানার ওসি সোমনাথ বসুসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুই পুলিশ সদস্যকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্র্শী সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মহিলা কলেজের পেছনের আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের বাসভবন থেকে একটি মিছিল বের করে বিএনপি। মিছিলটি শহরের পান্না চত্বর ঘুরে ফেরার সময় পেছনের দিকে থাকা নেতাকর্মীদের সঙ্গে হঠাৎই পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে ধাওয়া দেয়। পরে পুলিশ কয়েক রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে বিএনপির অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ বিএনপির ১৫ জন নেতাকর্মীকে আটক করে।
এ ঘটনার পর কালুখালী, পাংশা থেকে আসা বিএনপি নেতাকর্মীরা মেইল ট্রেনের জন্য রাজবাড়ী রেলস্টেশনে অপেক্ষমান ছিলেন। সে সময় সময় তারা জিআরপি থানার পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোমনাথ বসু জানান, রেল স্টেশনে টিকিটবিহীন যাত্রীদের চেক করার সময় বিএনপির লোকজন অতর্কিতে হামলা চালায়। ওরা সংখ্যায় অনেক বেশি থাকায় তাদের প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। হামলায় তিনিসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তার চোখে আঘাত লেগেছে। অন্য তিনজন হলেন এসআই বিধান চন্দ্র, বকশি আনন্দ কুমার ও কনস্টেবল শারমীন আক্তার। এদের মধ্যে বিধান ও শারমীন বর্তমানে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামলার ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেন, আমি পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছিলাম যে, শান্তিপূর্ণভাবে এই কর্মসূচি পালন করবো। আমাদের শোভাযাত্রার জন্য নির্ধারিত স্থান পান্না চত্বর ঘুরে আসার সময় পেছনের দিকে পুলিশ কী কারণে গুলি বর্ষণ করলো আমি বুঝতে পারলাম না। আমাদের নেতাকর্মীরা অত্যন্ত শান্ত ছিল। আমরা মিছিলের অগ্রভাগে ছিলাম। মিছিলটা যখন শেষ পর্যায়ে তখন এ ঘটনা ঘটে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মত একটি দিবসে এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
ঘটনাস্থলে থাকা রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, বিএনপির মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়ে যাচ্ছিল। তাদের প্রত্যেকের হাতে লাঠি ছিল। মিছিল যখন শেষের দিকে তখন লাঠি দিয়ে উস্কানীমূলকভাবে পুলিশ সদস্যদের আঘাত করে দলটির নেতারা। তখন এ ঘটনা ঘটে।
রাজবাাড়ীর পুলিশ সুপার জিএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, শান্তি শৃঙ্খলার সঙ্গে বিএনপিকে সমাবেশ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা নির্দেশনা অমান্য করে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে। যে কারণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। এ ঘটনায় পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জিআরপি থানায় যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। জানমালের নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটানো কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। সব ঘটনারই সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।