সারা বাংলা

কারাগারের দেয়াল ফুটো করে বেচাকেনা, জানে না কর্তৃপক্ষ

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি প্রায় ৭ হাজার। বন্দিদের নিরাপত্তার জন্য চারপাশে ভারী এবং উঁচু দেয়াল আছে। কারাগারে প্রবেশ এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেওয়ার একমাত্র পথ আরপি গেট। তবে, আরপি গেটের বাইরেও কারাগারের ভারী দেয়াল ফুটো করে চলছে পান, সিগারেটসহ অন্যান্য জিনিসপত্র বেচাকেনা। 

কারগারের দক্ষিণ পাশে জেলখানা রোড হালিমা গার্মেন্টস সংলগ্ন এলাকায় জেলখানার সীমানা প্রাচীরের তিনটি স্থানে ফুটো করা হয়েছে। সেখান দিয়ে স্থানীয় দোকানদারা কারাগারে ভেতর মালামাল সরবরাহ করেন। সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। এসব মুদি দোকানে মাদকদ্রব্যও বিক্রি হয় বলে জানা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই রমরমা ব্যবসা। এসব করে থাকেন কয়েকজন দোকানদার ও ভেতরের কারারক্ষীরা। 

কাশিমপুর কারাগারের দক্ষিণ পাশে জেলখানা রোড হালিমা গার্মেন্টস সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে কারাগারের দেয়ালে সেসব ফুটো দেখতে পেয়েছেন এই প্রতিবেদক। কাছে গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালের ইট ভেঙে ফুটো করা হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর দেখা যায়, কারাগারে ভেতর থেকে ফুটো দিয়ে একটি হাত বের করে ইশারা করা হচ্ছে। তার হাতে এক প্যাকেট ডার্বি ব্র্যান্ডের সিগারেট। ইশারা পেয়ে পাশের দোকান থেকে এক নারী সিগারেট নিয়ে আসলেন৷ পরে দোকান থেকে নগদ ৭৫ টাকা পরিশোধ করলেন। ওই নারীর নাম মমতা খাতুন। মমতা ও তার স্বামী শিপন এখানে মুদি দোকান চালান৷ 

কারাগারে ভেতর থেকে এভাবে জিনিসপত্র কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে মমতা খাতুন বলেন, ‘শুধু সিগারেটই কিনে থাকি। অন্য কিছু কিনি না৷’ 

এসব সিগারেট কোথায় পান বন্দিরা, এ প্রশ্নের জবাবে মমতা খাতুন বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজনরা বন্দিদের সিগারেট দেন। সেসব থেকে কিছুটা আমাদের কাছে বেচেন।’ 

মমতা খাতুনের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই আবারও কারাগারের দেয়ালের ফুটোতে আরেকটি হাত দেখা যায়। এবার মমতা খাতুনের সঙ্গে এ প্রতিবেদকও সেখানে যান। সেখানে একজনকে দেখা যায়। তার গায়ে কারারক্ষীর পোশাক, নেমপ্লেটে লেখা ‘মামুন’। ভেতর থেকে বলা হলো কলা ও রুটি দেওয়ার জন্য। 

কারাগারের বাইরে থেকে কলা-রুটি নেওয়ার সময় জানতে চাওয়া হলো, ‘এভাবে বাইরে থেকে নিচ্ছেন কেন? আবার বিক্রিও করছেন।এটা তো অন্যায়।’ প্রতিবেদকের কথা শুনে সেখানে থাকা দুই কারারক্ষী দৌড়ে পালান।

মমতা খাতুন বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকি৷ তারা ভেতর থেকে কলা, চা, বিস্কুট, পান-সিগারেট নিয়ে থাকেন৷ তবে, আমরা মাদকদ্রব্য বিক্রি করি না। বিশ্বাস করে ফুটো দিয়ে মাল দিই, অনেকেই মাল নিয়ে টাকাও দেয় না।’ 

এ বিষয় জানতে চাইলে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, ‘সীমানা প্রাচীরের দেয়ালে ফুটো, এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই। আপনি যেহেতু বলেছেন, বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেবো।’