ভিসা, পাসপোর্ট ছাড়া বিমানে উঠে আলোচনায় আসা শিশু জুনায়েদ মোল্লা বাড়ি ফিরে বাঁধা পড়েছে শিকলে। এর আগেও কাউকে কিছু না বলে চলে যাওয়ায় ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হতো। চার দিন আগে দাদিকে মাদ্রাসার যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে ঢাকায় গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে উঠে পড়ে বিমানে। জুনায়েদকে এক নজর দেখতে বাড়িতে ভিড় করেছে এলাকাবাসী।
আজ বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে জুনায়েদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি রুমের মধ্যে খাটের উপর বসে রয়েছে জুনায়েদ। পায়ে শিকল পরিয়ে ঘরের খুঁটির সঙ্গে শেকল তালাবদ্ধ করা রাখা হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর দেওয়া হয় ভাত। ভাত খেয়ে জানালা দিয়ে উদাস দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে তাকে জুনায়েদ। এমন ঘটনা সে ঘটিয়েছে কিছু বুঝতে পারছে না।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী ইমরান মোল্লার প্রথম পক্ষের ছেলে জুনায়েদ মোল্লা। মা অন্যত্র চলে যাওয়ার পর সৎ মায়ের কাছে বড় হতে থাকে জুনায়েদ। ভর্তি করে দেওয়া হয় উজানী হাফিজিয়া মাদ্রাসায়। এখন ওই মাদ্রাসার ৫ম শ্রেণীতে পড়ে। তবে বিভিন্ন সময় বাড়ির কাউকে না বলে বাইরে চলে যায় সে। এবার ঘটিয়েছে অবাক করা কাণ্ড।
শিশু জুনায়েদ জানায়, দাদি আসমা বেগমকে বলে তালাবদ্ধ ঘর থেকে বের হয় সে। এরপর প্রথমে ইজিবাইকে করে মুকসুদপুর বাসস্ট্যান্ডে যায়। তারপর ঢাকার বাসে উঠে চলে যায় সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে বাসে করে বসুন্ধরা, এরপর এয়ারপোর্ট যায়। এয়ারপোর্টে উপরে উঠতে গেলে বাধা পেয়ে অন্য পাশ দিয়ে ঘুরে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে জুনায়েদ। পরে অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে সোজা চলে যায় কুয়েতগামী কুয়েত এয়ারওয়েজের রাত ৩টা ১০ মিনিটের ফ্লাইটে। প্রায় ১ ঘণ্টার মতো বিমানের সিটে বসে থাকার পর ধরা পড়ে পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই বিমানে উঠে বসেছে জুনায়েদ। এর আগেও বাড়ির কাউকে কিছু না বলে ঢাকা, মংলা, ফরিদপুর, বাড়বাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে চলে যায় বলে জানিয়েছে জুনায়েদ।
বিমানের সিটে এক ঘণ্টার মতো বসার পর ওই সিটের যাত্রী আসার পর তাকে সিট থেকে তুলে দেওয়া হয়। তখন বিমানের আর কোনো সিট ফাঁকা ছিল না। পরে তাকে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে বিমানবন্দর থানা হেফাজতে রাখা হয়।
পরে এয়ারপোর্ট থানা থেকে ফোন আসার পর জুনায়েদের খোঁজ পায় পরিবার। পরে জুনায়েদের চাচা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে এসে আবারও পালিয়ে যায় জুনায়েদ। পরে খুঁজে বের করে পায়ে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনা পর থেকে জুনায়েদকে দেখতে বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে এলাকাবাসী। জুনায়েদ সহজ-সরল হওয়ায় ও মানসিক সমস্যার জন্য বার বার এমন কাজ করছে। তাকে ভালো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবারকে পরামর্শ দেন তারা।
জুনায়েদ মোল্লার ছোট চাচা ইউসুফ মোল্লা বলেন, এয়ারপোর্ট থানা থেকে তাকে মোবাইলে ফোন দিয়ে জুনায়েদ সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়ার পর ঘটনা সম্পর্কে জানানো হয়। তখন তার মা অথবা বাবাকে এসে জুনায়েদকে নিয়ে যেতে বলা হয়। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত ৩টার সময় জুনায়েতকে তার কাছে হস্তান্তর করা হয়। আজ বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বাড়িতে আসার পর আবারও পালিয়ে যায় জুনায়েদ। পরে ওর খালার বাড়ি থেকে তাকে ধরে আনা হয়েছে।
চাচা ইউসুফ মোল্লা আরও জানান, তার ভাতিজা জুনায়েদ মোল্লা দুরন্তপনা। তাকে হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়েছিল। সেখান থেকে সে বার বার পালিয়ে আসে বলে তাকে বাড়ির পাশে আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে জুনায়েদ ৫ম শ্রেণীতে পড়ে। তারপরও সে বাড়ি থেকে মাঝে মধ্যে হারিয়ে যায়, আবার একাই ফিরে আসে। এরআগেও সে পালিয়ে ঢাকা, মংলা, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছে।
জুনায়েদের বাবা ইমরান মোল্লা বলেন, ১৮ মাস বয়সে অভাব-অনাটনের কারণে জুনায়েদের মা ওকে ফেলে গিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে। পরে তিনি আবারও বিবাহ করেন। জুনায়েত ছাড়াও তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ওর সৎ মা অন্য ছেলে-মেয়ের মতো করে ওকে ভালবাসে। কিন্তু ছেলেটি সুযোগ পেলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর মনে হচ্ছে, ওর মানসিক সমস্যা হয়েছে। শীঘ্র ওকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
এক প্রশ্নের উত্তরে ইমরান মোল্রা বলেন, চিকিৎসা শেষে ওর পায়ের শিকল খুলে দেওয়া হবে। আর তাকে তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখা হবে না। পালিয়ে গেলে ঝামেলায় পড়তে হয়, তাই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিমানবন্দর থানার ওসি আজিজুল হক মিয়া জানান, শিশুটি থানা হেফাজতে ছিল। ওই অভিভাবক এসে ওকে নিয়ে গেছে।