সারা বাংলা

পুরাতন গোমতী কবে হাতিরঝিল হবে!

পুরাতন গোমতী নদী হাতিরঝিলে কবে পরিণত হবে, এ প্রশ্ন কুমিল্লা নগরবাসীর। কুমিল্লা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীটি দখলে দূষণে আজ মৃতপ্রায়।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত বিভিন্ন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো নগরীর বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি পুরাতন গোমতী নদীকে ঢাকার হাতিরঝিলের রূপ দান করা। যাতে দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ, নদী শাসন, ড্রেন নির্মাণ, গোমতীর পাড়ে রাস্তাঘাটের সংস্কার ও আলোকসজ্জার মাধ্যমে আধুনিকায়নে একধাপ এগিয়ে যাবে কুমিল্লা শহর। 

জাতীয় নির্বাচনের আগেই এই প্রকল্পের মাধ্যমে কুমিল্লার পুরাতন গোমতীকে ঢেলে সাজানোর কথা থাকলেও গত দেড় বছরে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। প্রকল্পের কাজ শুরুতো দূরের কথা, দখলদারদের কবল থেকে পুরাতন গোমতীকে মুক্ত করতে কাজই শুরু করতে পারেনি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন। তাই পুরাতন গোমতী নদী হাতিরঝিলে কবে পরিণত হবে, এ প্রশ্ন নগরবাসীর মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে।

বিগত দুই মেয়াদে কুমিল্লা সিটি কপোরেশেনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর নির্বাচনী ‘ইশতেহারে পুরাতন গোমতীকে দখলমুক্ত করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার কথা থাকলে ১০ বছরেও তা তিনি করতে পারেনি। তবে প্রকল্পটির অনুমোদনের পর আশাবাদী হয়েছিল কুমিল্লার নগরীবাসী । এমন অবস্থায় দ্রুত প্রকল্পের কাজ শুরু করে পুরাতন গোমতী নদীকে হাতিরঝিলের আদলে রূপ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কুমিল্লা নগরীর বাসিন্দারা।

গোমতী নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিবিরবাজার সীমান্ত দিয়ে কুমিল্লা জেলায় প্রবেশ করে। শহর রক্ষার জন্য এ নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হলে শহরের উত্তর প্রান্তে কাপ্তানবাজার থেকে শুভপুর পর্যন্ত দীর্ঘ নদীটি পুরনো গোমতী নদী নামে পরিচিতি লাভ করে। এরপর থেকে রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখলে নিয়ে নির্মাণ করে বাড়িঘর ও দোকানপাট। কেউ কেউ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের যোগসাজশে বহুতল ভবনও নির্মাণ করে ফেলেছে।

কুমিল্লা সিটি কপোরেশনের সূত্র জানায়, শহরের শুভপুর, চাঁনপুর, সুজানগর, গাংচর, টিক্কারচর, গয়ামবাগিচা, মোগলটুলী (শাহসুজা মসজিদ রোড), পুরাতন চৌধুরীপাড়া, কাপ্তানবাজার, ভাটপাড়া, বিষ্ণপুর ও বজ্রপুর এলাকার মধ্যে পুরাতন গোমতীর দুই পাড়ের প্রায় ২০০ একর সরকারি ভূমি দখলদারদের কবলে রয়েছে। এর মধ্যে ৫২২ জন দখলদারের তালিকা করা হয়েছে। 

গোমতী নদী প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আবু সায়েম ভূঁইয়া বলেন, আগামি মাসে আমাদের মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। নানা জটিলতায় কাজ শুরু হয়নি। এরই মধ্যে আমরা পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছি। এছাড়া পুরাতন গোমতী নদীর দখলদারদের উচ্ছেদ ও ভূমিগ্রহণের কাজ শুরু হবে একই সাথে। বিশেষ করে পুরাতন গোমতীকে ঢাকার হাতির ঝিলের ন্যায় রূপ দান করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নগরবিদ বলেন, এ প্রকল্পের প্রধান বাধা হবে পুরাতন গোমতীর বুকে ৫২২ জন দখলদার। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), কুমিল্লার সভাপতি শাহ মোহাম্মাদ আলমগীর খান বলেন, নগরবাসীর পক্ষ থেকে আমরা বিগত মেয়রকে বলছি, তিনি এ বিষয় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বর্তমান মেয়রকে বারবার বলা হয়েছে, আমরা চাই পুরাতন গোমতীকে দখলমুক্ত করে একটি বিনোদন কেন্দ্র করা হোক। আমরা এ প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। দখল হওয়া ভুমিগুলো উচ্ছেদ করে এ প্রকল্পের কাজ করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের মিটিং-এ আমরা বারবার বলেছি বিষয়টি। কিন্তু কোনো অদৃশ্য কারণে কেনো কিছুই হচ্ছে না। কার কারণে হচ্ছে না, আমরা জানতে চাই। এখানে কার কী স্বার্থ জড়িত আমরা বুঝতে পারছি না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান বলেন, আমরা কাউকে নদীর জায়গা ইজারা দেইনি। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হলে মানুষকে সচেতন হতে হবে। আমরা প্রতি বছরই বাজেট অনুযায়ী অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করি। মানুষ সচেতন না হলে সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ সম্ভব নয়। আর সিটি কর্পোরেশন এই মেগা প্রকল্পের বিষয়ে আমাদের সাথে আলোচনা করেনি। এই বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু: মুশফিকুর রহমান বলেন, আমরা সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে দখলদারদের তালিকা নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবো। যারাই অবৈধভাবে দখল করেছে-তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না।