সারা বাংলা

দিনে মজুরি ৬০ টাকা, তাও বাকী পড়ে আছে এক বছরের

দিনে মজুরি মাত্র ৬০ টাকা। এক বছরেরও বেশি মজুরির সে টাকাও বাকী পড়ে আছে। অর্থাভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন উত্তম দাস। আক্ষেপ করে বলেন, ‘দিনে ৬০ টাকা মজুরি এটা কি বিশ্বের কোথাও আছে? তাও পাচ্ছিনা আমি।’ 

উত্তম রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর বিবেকানন্দ পল্লীর (হরিজন পল্লী) বাসিন্দা। তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ৬০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন।

উত্তম দাস জানান, তার বাবা রামসরণ পরিচ্ছন্নতা কর্মী ছিলেন। এটাই তাদের জাতিগত পেশা। ১৯৮৯ সালে তার বাবা মারা যান। তখন তার বয়স মাত্র ৯ বছর। তখন থেকেই সংসারের বোঝা তার ঘাড়ে। বর্তমানে সংসারে মা, স্ত্রী ও তিন ছেলে মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক, ছোট মেয়ে নবম এবং ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। 

১২ বছর আগে তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দৈনিক ৬০ টাকা মজুরিভিত্তিক চুক্তিতে কাজ নেন। মাসে যে কয়দিন কাজ করেন শুধু সেই কয়দিনের টাকা হিসেবে ধরা হয়। বছর শেষে দেওয়া হয় তার মজুরির টাকা। ২০২১ সালের মুজুরির টাকা পেয়েছিলেন ২০২২ সালে। তাও পুরো টাকা পাননি। সাত মাসের টাকা পেয়েছিলেন। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২১ মাসের টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু বৃহস্পতিবার জানতে পারেন এবারও পুরো টাকা পাবেন না। অর্ধেক টাকার বাজেট আছে। 

তিনি জানান, সকাল ৮টায় অফিস যেতে হয়। তিন ঘণ্টা থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা কাজ করতে হয়। মাত্র ৬০ টাকা মজুরিতে বাংলাদেশে কোনো কাজ করা যায় কীনা তা নিয়ে আক্ষেপ করেন তিনি। এ কাজের পাশাপাশি রাজবাড়ী পৌরসভায় ২১শ টাকা মাসিক বেতনেও কাজ করেন। বর্তমানে বাজারে যে জিনিসপত্রের দাম তা দিয়ে সংসার চালানো কোনো মতেই সম্ভব হচ্ছে না। তার মা বয়োবৃদ্ধ মানুষ। নানান রোগ বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। তারও ওষুধ কিনতে হয়। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ আছে। তাদের শখ করে কোনো কিছু কিনে দিতে পারেন না। অর্থাভাবে খুবই খারাপ অবস্থায় আছেন তারা।

উত্তম জানান, এ পেশা ছেড়ে যে চলে আসবেন। সে উপায়ও নেই। ব্যবসা করার মত কোনো পুঁজি নেই। চায়ের দোকান দিলেও মানুষ তার দোকানে চা খেতে আসবে না। নিচু জাতি বলে মানুষ ঘৃণা করে। সরকার যদি তাদের দিকে একটু তাকাতো তাহলে ছেলে মেয়ে পরিবার নিয়ে একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারতেন।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলা সাব-রেজিস্টার শওকত হোসেন মো. আফি বলেন, তার (উত্তম দাস) নিয়োগটি অনেক আগের। কী চুক্তিতে বা কীভাবে নিয়োগ, সে বিষয়টি জানা নেই। অধিদপ্তরের আইনের উপরে তো আর কথা বলার সুযোগ নেই। তবে, বর্তমান বাজার মূল্যে এত কম মজুরিতে কারও চলা সম্ভব নয়। যদি আমার দিক থেকে মজুরি বাড়ানোর কোনো সুযোগ থাকে তাহলে অবশ্যই চেষ্টা করবো।