ঢাকার ধামরাইয়ে টাঙ্গাইল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের এক মাসের বেতন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ১৬ জন শিক্ষক।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নিয়ম অনুযায়ী প্রভিডেন্ট ফান্ডের নামে শিক্ষকদের বেতন থেকে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে কেটে নেওয়া হতো। এভাবে ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১ মার্চ পর্যন্ত অর্থ কেটে রাখা হয়। এরমধ্যে চাকরি ছেড়ে যাওয়া কয়েক জনের আংশিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পরিশোধ করা হলেও বেশিরভাগ শিক্ষকই এ টাকা পাননি। এ ছাড়া ২০২০ সালের মার্চ মাসের বেতনও পাননি তারা। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার বলা হলেও অর্থ পরিশোধ না করায় তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ করেন।
প্রায় দশ বছর ধরে টাঙ্গাইল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গণিত বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন আয়নাল হক। তার দুই সন্তানকেও পড়িয়েছেন একই প্রতিষ্ঠানে। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা নেওয়ার নিয়ম চালু হয়। এরপর টানা ২০২০ সাল পর্যন্ত টাকা কেটে রেখেছেন তারা। কয়েকজনকে সেই সময় একাংশ টাকা দেয়। পরবর্তীতে আমি ২০২৩ সালের জুনে নিয়ম মেনে চাকরি ছেড়ে দেই। এরপর তাদের কাছে বার বার টাকা চাইলেও টাকা দেননি তারা।’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সহকারী শাখা প্রধান মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমি আট বছর সেখানে শিক্ষকতা করেছি। ওই সময় ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টাকা কেটে রেখেছে। কিন্তু আমার ২০২০ সালের মার্চ মাসের বেতন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ পরিশোধ করেননি তারা।’
টাঙ্গাইল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা হয়। প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন তারা। টাঙ্গাইল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ধামরাই শাখা প্রধান মহিদুল ইসলাম জানান, অভিযোগকারী শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকজনের সন্তান এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়েছেন৷ তাদের একেকজনের কাছে অর্থ পাওনা রয়েছে। এরমধ্যে আয়নাল হকের দুই সন্তানের কাছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ টাকা, মমতাজ বেগমের দুই সন্তানের পড়াশোনা বাবদ ৩ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ টাকাসহ কয়েকজনের কাছে কয়েক লাখ টাকা পাওনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী টাকা কেটে রাখা হয়েছে। তাদের কাছে সন্তান পড়ানো বাবদ টাকা পাওনা ছিল। তারা কখনো আমাদের কাছে আসেননি। যেহেতু তারা বাইরে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি আইনগতভাবেই মোকাবিলা করা হবে। আর পাওনা থাকলে সেটি দেওয়া হবে।’
মানসুরা আক্তার নামে এক শিক্ষক জানান, তার মেয়ে পড়ানো বাবদ বকেয়া টাকা মাসের বেতন থেকে কেটে রাখা হয়। একইভাবে আয়নাল হক, মমতাজ বেগমসহ কয়েকজনও জানান, প্রতিমাসে বেতন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নগদ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। উপজেলা থেকে জানানো হয়েছে। এই বিষয়ে সরাসরি কথা বলে মোকাবিলা করা হবে।’
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে বসে বিষয়টি সমাধান করা হবে। সমাধান না হলে আইনত যে ব্যবস্থা তা নেওয়া হবে।’