সারা বাংলা

আজ কিশোরগঞ্জ বড়ইতলা গণহত্যা দিবস

৫২ বছর আগের দিনটির কথা মনে হলে আজও শিউরে উঠেন তারা। কিন্তু এই গণহত্যার বিচার পায়নি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। জোটেনি রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা কিংবা মর্যাদায়ও।

১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের বড়ইতলা গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে ৩৬৫ জন মানুষকে। 

বছর ঘুরে দিনটি ফিরে এলে স্বজনহারা লোকজন নীরবে চোখের জলে ভাসেন। এ ঘটনার সাক্ষী অনেকেই এখনো জীবিত।

’৭১ এর এই দিনটির ভয়বহতা অনুভব করেছিল বড়ইতলা গ্রামের ৩৬৫ জন মানুষ। যাদেরকে পাকিস্তানী বাহিনী নিমর্মভাবে হত্যা করেছিল। আর এমন হত্যাকান্ডে পাকিস্তানী বাহিনীকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছিল স্থানীয় রাজাকাররা। যাদের প্রশয়ে পাকিস্তানীরা নিমর্মভাবে হত্যা করে শত শত নিরীহ মানুষকে। জ্বালিয়ে ছাড়খাড় করে দেয়া হয় কয়েকটি গ্রাম।

ইতিহাসের এই নির্মম ঘটনার সাক্ষী মোমতাজ উদ্দিন জানান, একাত্তরের ১৩ অক্টোবর সকালে পাকসেনাদের একটি ট্রেন এসে থামে বড়ইতলা গ্রামের কাছে। সেখানে স্থানীয় রাজাকারদের নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে একটি সমাবেশ করার চেষ্টা চালায়। এ সময় রাজাকাররা এক পাকসেনাকে গ্রামবাসী হত্যা করেছে বলে গুজব রটিয়ে দেয়। এর পরই হিংস্র পশুর মতো নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী। 

বড়ইতলা, চিকনিরচর ও দামপাড়াসহ আশপাশের এলাকার পাঁচ শতাধিক লোককে ধরে এনে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রেল লাইনের পাশে জড়ো করে। এক পর্যায়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় ৩৬৫ জনকে। এতে গুরুতর আহত হয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। দুঃস্বপ্নের মত এখনও যেন সেই বিভৎস দিনগুলো তাকে তাড়া করে বেড়ায় মোমতাজ উদ্দিনকে।

সেদিনের নিহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ নতুন প্রজন্মের কাছে সে নির্মমতাকে স্মরণীয় করে রেখেছে। কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী সাবরিনা আক্তার প্রতিদিনই কলেজে যাওয়া আসার পথে একবার হলেও স্মৃতিসৌধটি চোখ বুলিয়ে দেখেন। তিনি জানান, পরিবারের গুরুজনদের কাছে এখানকার স্মৃতিসৌধের অনেক গল্প শুনেছি। শুনেছি কিভাবে এখানে নির্মমভাবে নিরীহ মানুষদের হত্যা করা হয়েছে। 

বড়ইতলা স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের জন্য জমি দান করেছিলেন মো. মর্ত্তুজ আলী। বর্তমান স্মৃতিসৌধটি তার দান করা সেই জমির উপরই দাঁড়িয়ে আছে। তিনি খুব গর্বিত, তবে ১৩ অক্টোবর ছাড়া কখনও স্মৃতিসৌধটির খোঁজ কেউ না রাখায় আক্ষেপও রয়েছে অনেক। 

দিনের পর দিন এ স্মৃতিসৌধটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পরে ছিল। বর্তমানে স্মৃতিসৌধটি রক্ষায় বাউন্ডারী ও গেইট নির্মাণ করা হয়েছে। তবে জায়গাটি অরক্ষিত। এখানে যদি একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পাঠাগার স্থাপন করা হয়, তাহলে এর স্মৃতিসৌধের মর্ম নতুন প্রজন্মের কাছে উঠে আসবে, বলেন তিনি।