দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটকের আনাগোনা কম থাকার সুবিধা নিয়ে নিয়ম ভেঙে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। মৌসুমে অধিক পর্যটক ধারণ করার জন্য নতুন নতুন ভবন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বীপের গলাচিপা, ডেইল পাড়া, দক্ষিণপাড়া, পূর্বপাড়া ও উত্তর সি বিচ এলাকায় নতুন ভবন গড়ে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি পুরাতন রিসোর্ট বা হোটেল চত্বরে নতুন ভবন নির্মাণের কাজও চলছে খুবই দ্রুত গতিতে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সেন্টমার্টিনে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনার সংখ্যা প্রায় ২০০টি।
সেন্টমার্টিনে অবস্থানরত পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফাইজুল কবির বলেন, ‘গত বছর পর্যন্ত দ্বীপে অবৈধভাবে নির্মিত রিসোর্টের সংখ্যা ছিল ১৯২টি। এরপর আরও নতুন করে স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। আমরা সেগুলোর তালিকা করছি। নতুন ১৪টি পাকা ও আধাপাকা রিসোর্ট মালিককে নোটিশ দিয়ে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এরই মধ্যে অনেক স্থাপনার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পরিবেশবাদীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ পর্যটন মৌসুম শেষে তাদের স্থাপনাগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। যাতে কারও নজরে না আসে। সেখানে একতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত অর্ধশতাধিক স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে নির্মাণ সামগ্রী নেওয়া নিষিদ্ধ। সরকারি কাজের জন্য নিতে হলেও উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। তবে কিছু অসাধু ও প্রভাবশালী গোষ্ঠী রাতের আঁধারে এসব নির্মাণ সামগ্রী নিয়মিত দ্বীপে নিয়ে যায়।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘স্থাপনা হচ্ছে সত্য। আমরা তাদের নিষেধ করছি এটাও সত্য। কিন্তু আমি খুব ছোট মানুষ। বড় বড় মানুষরা এসব কাজের সঙ্গে জড়িত। আমাদেরও তো সীমাবদ্ধতা আছে, বুঝেনই তো।’
নিষিদ্ধ থাকার পরও মালামাল কীভাবে সেন্টমার্টিনে প্রবেশ করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে কিন্তু অনেক সরকারি কাজ চলে। যেমন লাইট হাউজ হচ্ছে, পোস্ট অফিস হচ্ছে, সরকারি বিভিন্ন অফিস হচ্ছে। তাদের মালামাল আসছে। আমরা শুনি যে, এর ফাঁকে ফাঁকে নাকি অসাধু ব্যক্তিরাও নিজেদের মালামাল নিয়ে আসছেন।’
ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমি একাধিকবার জেলা প্রশাসনকে বলেছি। তাদের বলেছি, সেন্টমার্টিনের পরিবেশের ভারসাম্য যদি বজায় রাখতে চান, তাহলে এখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের স্থায়ী লোক দিতে হবে, অভিযান চালাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিতে হবে। যারা অবৈধভাবে স্থাপনা তৈরির উদ্যোগ নেবেন সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেই স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেবেন।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘টেকনাফে যেকোনো নির্মাণ সামগ্রী নিতে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগে। কিন্তু একটি অসাধুগোষ্ঠী রাতের আঁধারে বোটে (সার্ভিস ট্রলার) করে অনেক সময় মালামাল নিয়ে যায়। সাগর উত্তালের সময় টেকনাফে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে। তখন হয়তো এটা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে আমরা উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের একটি তালিকা তৈরি করেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে আগামী সপ্তাহের শুরুতেই এসব স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করবো।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সভাতেও সেন্টমার্টিনের অবৈধ স্থাপনার বিষয়টি আলোচনায় আসে। তখন এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ দ্রুত অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের সভায় সেন্টমার্টিনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তালিকাও হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও পরিবশে অধিদপ্তর দ্রুতই অভিযানে নামবে।’