সিজারিয়ান অপারেশনের পর নবজাতকের বিনিময়ে নার্সিং হোমের বিল পরিশোধ করেছেন অসহায় এক নানা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখন নবজাতককে ফিরে পেতে চান মা। শনিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার ফরিদপুর গ্রামে কথা হয় ওই নবজাতকের মা শিরিন আক্তারের সঙ্গে।
শিরিন আক্তার বলেন, তার স্বামী আরিফুল ইসলাম পরিবহন শ্রমিক। তিনি মাদকা সেবন করেন। স্বামীকে অনেকবার মাদক ছাড়তে অনুরোধ করলেও কথা শুনতেন না। আরিফুল মাদক না ছাড়ায় ৪/৫ মাস আগে তিনি তার বাবার বাড়িতে চলে আসেন। এরপর থেকে স্বামী আরিফুলের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই।
শিরিন আক্তারের বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার মনিকুরা গ্রামে। তিনি মা-বাবার সঙ্গে শ্রীপুরের ফরিদপুর গ্রামে ভাড়া থাকেন। তার আবু জাহিদ নামে দেড় বছর বয়সী আরও একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। শিরিন আক্তারের বাবা সিরাজুল ইসলাম স্থানীয় একটি ছ'মিলের মিস্ত্রি। বাড়তি আয় করতে মাঝে মধ্যে অটোরিকশাও চালান তিনি।
শিরিন আক্তার বলেন, গতকাল শুক্রবার দুপুরে আমি নার্সিং হোমের বেডে ছেলেকে নিয়ে শুয়ে ছিলাম। প্রতিবেশী শামসুন্নাহার এসে আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। আমি ছেলেকে বেডে রেখে সেখানে গেলে তারা আমার হাতে ওষুধের জন্য ১৫০০ টাকা ধরিয়ে দেয়। আমি তখনও বুঝতে পারিনি যে আমার ছেলেকে তারা নিয়ে যাবে। আমি ফিরে এসে দেখি বেডে আমার ছেলে নেই। শেষবারের মতো তারা আমাকে আমার সন্তানকে দেখতেও দেয়নি। এখন আমি আমার সন্তানকে ফেরত চাই।
শিরিন আক্তারের বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্বামী চলে যাওয়ার পর থেকেই মেয়ে আমাদের কাছে থাকে। মেয়েকে নিয়ে মাথায় বাড়তি চাপ ছিল। আমি বিষয়টি নিয়ে শামসুন্নাহার নামের প্রতিবেশী এক নারীর সঙ্গে পরামর্শ করি। ওই নারী আমার মেয়ের সিজারিয়ান অপারেশন করতে ১৩ হাজার টাকায় ময়মনসিংহের স্বাধীন নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করিয়ে দেয়। গত ১৬ অক্টোবর গর্ভবতী মেয়েকে ময়মনসিংহের চরপাড়া এলাকার স্বাধীন নার্সিং হোমে ভর্তি করাই। সেখানে শিরিন সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। গত ১৯ অক্টোবর হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার দিন আমাদের জানানো হয়, হাসপাতালের বিল ২৪ হাজার ৫০০ টাকা হয়েছে। তখন আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। তারা আমাকে বিল পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকে। সেসময় আমার কাছে ১৩ হাজার টাকা ছিল। এক পর্যায়ে শামসুন্নাহার নবজাতককে দত্তক দেওয়ার পরামর্শ দেন।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, সন্তান দত্তক দিলে হাসপাতালে বিল পরিশোধ করে নগদ কিছু টাকাও দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি করা অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে তখন আমার নাতিকে শামসুন্নাহার ও আল-আমিন নামে এক ব্যক্তির হাতে তুলে দেই। এরপর থেকেই আমার মেয়ে তার ছেলের জন্য শুধুই কান্না করছে। নবজাতককে ফিরিয়ে আনতে গেলে তারা এখন ৭০ হাজার টাকা দাবি করছেন। শামসুন্নাহার বলেছেন, এ টাকা না দিলে নবজাতককে ফেরত পাব না। কিন্তু তাদের দাবি করা টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই।
নবজাতকের নানা বলেন, আমার কাছে ১৫ হাজার টাকা আছে। বিল অনুযায়ী টাকা জোগাড় করে নবজাতককে ফিরিয়ে আনার কথা তাদের জানালই। কিন্তু তারা এখন ৭০ হাজার টাকা দাবি করছে।
প্রতিবেশী শামসুন্নাহার বলেন, প্রথমে ১৩ হাজার টাকা চুক্তি থাকলেও অপারেশনে কিছু জটিলতা ছিল। তাই নার্সিং হোম বিল বাড়িয়ে দেয়। পরিবারটি বিল দিতে না পারায় তারা আল-আমিনের কাছে নবজাতককে তুলে দেয়। আল-আমিন বিল দিয়ে নবজাতককে নিয়ে যায়। তবে নবজাতক এখন কোথায় রয়েছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট আল-আমিন নামের ওই ব্যক্তির কোনো নাম ঠিকানা বা মুঠোফোন নম্বর না থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
স্বাধীন নার্সিং হোমের পরিচালক মো. খোকন বলেন, শিরিন নামের ওই নারীর একটি ছেলে সন্তান হয়। পূর্ব থেকে তাদের কতো টাকা চুক্তি ছিল তা আমাদের জানা নেই। তবে হাসপাতালের বিল হয়েছিল ২৪ হাজার ৫০০ টাকা। যা পরিশোধ করার পর তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বিল কে দিয়েছে আর নবজাতককে কি করেছে এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের কেউ এখন পর্যন্ত জানায়নি। আমার কাছে যদি পরিবারটি সহায়তার জন্য আসে অবশ্যই তাদের যথাযথ সহায়তা করা হবে।