সারা বাংলা

চিলাহাটি রেল স্টেশনের আইকনিক ভবনের উদ্বোধন শনিবার

শনিবার (৪ নভেম্বর) নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি রেল স্টেশনের আইকনিক ভবন উদ্বোধন করা হবে। রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন প্রধান অতিথি হিসেবে এই ভবনটি উদ্বোধন করবেন। আইকনিক ভবনে ঢাকা-শিলিগুড়ি রেলপথে ‘মিতালী এক্সপ্রেস’ ট্রেনের যাত্রীদের জন্য চিলাহাটি স্টেশনে ইমিগ্রেশন ও কাষ্টমস কার্যক্রমের ব্যবস্থা থাকায় আনন্দের শেষ নেই গোটা রংপুর বিভাগে।

দেশের উত্তরাঞ্চলের শেষ রেলওয়ে স্টেশন চিলাহাটি। এই স্টেশন দিয়ে ভারতের হলদিবাড়ি রেলপথে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যাত্রীবাহী ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস চলাচল করছে। তবে, চিলাহাটি স্টেশনে যাত্রী উঠা-নামার ব্যবস্থা না থাকায় এ ট্রেনের কোনো সুবিধা পাচ্ছিলেন না উত্তরাঞ্চলের মানুষ। কেননা, দেশের অভ্যন্তরে ইমিগ্রেশন না থাকায় শুধুমাত্র ঢাকায় ইমিগ্রেশন ও কাষ্টমস কার্যক্রম সম্পন্ন করে যাতায়ত করতে হয় চিলাহটি হয়ে শিলিগুড়ির এই মিতালী এক্সপ্রেসে।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারী এ ট্রেনে যাতায়তের জন্য উত্তরবঙ্গে ইমিগ্রেশন চালুর দাবি ছিল শুরু থেকেই। সেটা মাথায় রেখেই প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চিলাহাটিতে আধুনিক রেলওয়ে ষ্টেশন নির্মাণের সিধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। খুব তাড়াতাড়ি এই ষ্টেশন থেকে মিতালী এক্সপ্রেসে ট্রেনে উঠা নামার সুযোগ মিলবে এই খবরে উচ্ছাসিত স্থানীয় জনগণ ও যাত্রীরা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে ষ্টেশনটির। শনিবার ষ্টেশন উদ্বোধন করবেন রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। তবে ষ্টেশনটি পুরোপুরি ব্যবহারের জন্য আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রথমে অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে ষ্টেশনটি। পরবর্তীতে ইমিগ্রেশন চালু করা হবে।

২০১৯ সালের জুনে শুরু হয় চিলহাটি ষ্টেশনের আধুনিকায়নের কাজ। করোনা মহামারি ও নকশা জটিলতার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকে নির্মাণ কাজ। নকশা সংশোধণ করে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক ষ্টেশনের আদলে চিলাহাটি রেলওয়ে ষ্টেশনের আইকনিক ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। আধুনিক যাত্রী সুবিধার জন্য টিকিট কাউন্টার, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর বিশ্রামাগার থাকবে স্টেশনে। থাকছে রেলওয়ের কার্যক্রম চালানোর জন্য বিভিন্ন বিভাগের অফিস। ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় থাকছে ব্যাংক ও রেস্তোরাঁ । তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইমিগ্রেশন পয়েন্ট। চিলাহাটি হয়ে ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাত্রীরা চলাচল করতে পারবেন এই ষ্টেশন থেকেই। এতদিন মিতালী এক্সপ্রেসে যাতায়তের জন্য ঢাকা থেকে ইমিগ্রেশন হলেও সেই সুবিধা চিলাহাটি থেকেই পাবেন উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা। ফলে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যেই এখানকার যাত্রীরা পৌঁছে যেতে পারবেন ভারতের শিলিগুড়িতে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইলিয়াছ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিনের দাবি খুব অল্প সময়ের মধ্যে পূরণ হতে যাচ্ছে। এই ষ্টেশন চালুর ফলে এখানে ইমিগ্রেশন ও ঝুলে থাকা স্থলবন্দর চালু হতে যাচ্ছে। মিতালী এক্সপ্রেসের যাত্রীরা এখান থেকে যাতায়ত করতে পারবেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে। এখানকার মানুষরা চিকিৎসাসহ অন্য কাজে সহজেই ভারতে যেতে পারবেন।

জুয়েল বসুনিয়া বলেন, আমাদের চিলাহাটি আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। স্থলবন্দর চালু হলে ব্যবসা বানিজ্য ভালো হবে। চলাচলের জন্য ভালো হবে, ইনকাম হবে ও ভারত যাওয়া আসার সুবিধা হবে। এখান দিয়ে ভারতের ট্রেন চলে ঠিকই, কিন্তু আমরা উঠতে পারি না। এটাই দুঃখ আমাদের। চিলাহাটিতে ইমিগ্রেশন যদি চালু করে দেওয় হয় তাহলে আমাদের অনেক সুবিধা হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা রাসেল ইসলাম বলেন, ‌‌‌‘আমাদের অবহেলিত এলাকায় এলাকায় একটি বড় ষ্টেশন হইলো। এখানে আমাদের স্থলবন্দর হবে। আমরা চাই এখান থেকে পাসপোর্টের মাধ্যমে মানুষ ভারতে যাক। হাজার হাজার ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রীকে। কারণ উনি আমাদের এলাকায় এতো সুন্দর একটি কাজ করে দিচ্ছেন।’

যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সরকার ফারহানা আক্তার সুমি বলেন, শনিবার একটি উৎসব হতে যাচ্ছে আমাদের উত্তরবঙ্গের জন্য। এই দিন আমাদের আইকনিক ভবন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এটি উত্তর বঙ্গের তথা রংপুর বিভাগের জন্য দৃষ্টান্তমূলক উদারণ।

তিনি আরও বলেন, আমরা জানি দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রেলসংযোগ চালু হয়েছে। বিএনপির শাসন আমলে দেখেছি, রেল লাইন তুলে নিয়ে যেতে। সেখানে নতুন করে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দুঃখের বিষয় হলো মিতালী এক্সপ্রেস আমাদের বুকের ওপর দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমরা উঠতে পারছি না। আইনিক ভবন চালুর পর আমাদের সাধারণ জনগন চিলাহাটি থেকে ট্রেনে উঠতে পারবে এবং ভারতে যেতে পারবে। এতে দুই দেশের সম্পর্ক আরো ভালো হবে।

চিলাহাটি রেলওয়ে ষ্টেশন মাস্টার রুহুল আমিন বলেন, ষ্টেশন ভবনটি খুব তাড়াতাড়ি চালু হতে যাচ্ছে। এর ফলে এখানে ইমিগ্রেশন ও কাষ্টমস চালু হবে। এর ফলে এই অঞ্চলের যাত্রীরা এই ষ্টেশন থেকেই খুব সহজেই ভারতে যাতায়াত করতে পারবেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদারি কোম্পানি যেভাবে কাজ করছে আশা করি খুব দ্রুত তারা শতভাগ কাজ সম্পন্ন করতে পারবে।  

রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ওয়ালী-উল হক বলেন, আইকনিক ষ্টেশন ভবনের মধ্যে কাষ্টমস ও ইমিগ্রেশন সুবিধা থাকবে। পাশাপাশি রেস্তোরাঁ ও ব্যাংকের সুবিধা থাকবে। এছাড়াও ট্রেন পরিচালনার জন্য সব বিষয় সেখানে অর্ন্তভুক্ত থাকবে।

রেলওয়ের পশ্চিম জোনের প্রকল্প পরিচালক ও বিভাগীয় প্রকৌশলী (পাকশী-২) আবদুর রহিম বলেন, বেশ কিছু ফিনিশিংয়ের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। যেহেতু, কেবলমাত্রই বৃষ্টি শেষ হলো তাই আমাদের রঙের কাজ ও অন্যান্য ফিনিশিংয়ের কাজ ধাপে ধাপে করতে হচ্ছে। 

প্রসঙ্গত, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর বাংলাদেশের চিলাহাটি আর ভারতের হলদিবাড়ী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৫৫ বছর পর ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ২০২১ সালের ২৭ মার্চ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য মিতালী এক্সপ্রেস উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে, করোনাভাইরাস ও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে যায় মিতালী এক্সপ্রেসের চলাচল। উদ্বোধনের প্রায় দুই বছর পর ২০২২ সালের জুনে চালু হয় যাত্রীবাহী ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস।